পদের জন্য টাকা দাবি, যুব মহিলা লীগ নেত্রীর অডিও ফাঁস
নড়াইল জেলার কালিয়া থানা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে মাছুরা বেগম নামের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থীর কাছ থেকে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের টাকা দাবির একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় মাছুরার স্বামী ইকবাল হোসেন তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিলিনার ভাষ্য, সম্মেলনের খরচের জন্য কিছু অর্থ চাওয়া হয়েছে, কোনো ব্যক্তি স্বার্থের জন্য নয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় টায় কালিয়া পৌর কমিউনিটি সেন্টারে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
মাছুরার স্বামী ইকবাল হোসেন ও জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ অ্যাডভোকেট মিলিনার ফোনালাপ
ইকবাল হোসেন: কেমন আছেন?
অ্যাডভোকেট মিলিনা: আলহামদুল্লিাহ, ভালো আছি।
ইকবাল হোসেন: কী অবস্থা? শরীর-স্বাস্থ্য ভালো আছে?
অ্যাডভোকেট মিলিনা: কম্পিউটারে কাজ করছি।
ইকবাল হোসেন: বিজি?
অ্যাডভোকেট মিলিনা: বলেন, সিস্টেম করছি তো। আমি শুনছি, বলেন।
ইকবাল হোসেন: আগামীকাল আসবো। ভাবির সাথে কথা হয়েছে?
অ্যাডভোকেট মিলিনা: আপনাকে বলেছি না ভাবি যেন দেখা করেন? কথা হয়েছে। উনি যেটা বলে সেটা হয় না। উনি কথার মধ্যে আসেনি। উনি থাকবে না কমিটির মধ্যে। উনি মেয়রের দোহাই দিচ্ছেন। উনি বলেছেন, মেয়রের সাথে কথা হয়েছে, মেয়র দেখবেন। এগুলোতো হবে না। তিনি প্রার্থী। একজন সাংগঠনিক প্রার্থী। একটি ভাইটাল পোস্ট। উনাকে ৩০-৫০ (হাজার) বলিনি, সর্বোচ্চ টুয়েন্টি। সেটা যদি না পারে তাহলে তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি বাবার হোটেল খুলে বসেছি নাকি যে মানুষগুলোকে পদও দিয়ে যাবো ফ্রি ফ্রি। ফ্রি ফ্রি মানুষগুলোকে খাওয়াইয়ে হাইলাইট করবো? আমার এত দায় নেই, ভাই সরি। তাকে বলেছি, আপনার গাড়ি আনার দরকার নেই। আমার ৪০টি গাড়ি থাকবে। আপনি ১০-১৫ জন যা পারেন, আনবেন। এসে খাওয়া-দাওয়া করে, সম্মেলন করে পদটি নিয়ে চলে যাবেন, শেষ। উনি বলেছেন আমার পক্ষে ১৫-২০ হাজার টাকা দেওয়া সম্ভব না। সম্মেলন যেহেতু সবাই মিলে করছি, যারা সভাপতি-সেক্রেটারি হবেন তারা, আমি সম্মেলনে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে। কে টাকা দেবে? মেয়র দেবে ১০ হাজার টাকা। স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে কিছু নেওয়া হচ্ছে না। এরপর ফোনটি কেটে যায়।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে কালিয়া উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী মাছুরা বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রী প্রথমে কালিয়া উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তার প্রার্থিতার বিষয়ে সপ্তাহখানেক আগে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ অ্যাডভোকেট মিলিনার সঙ্গে সরাসরি তার বাসায় দেখা করে বলি, আমার স্ত্রী কালিয়া যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, যদি যোগ্য হয় তাহলে বিবেচনা করবেন। তিনি (মিলিনা) বলেন, সভাপতি ও সাধারণ পদ ঠিক হয়ে গেছে। এখন সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেওয়া যেতে পারে। তখন সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য বায়োডাটা জমা দেই। তিনি মাছুরাকে দেখা করতে বলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাছুরা মিলিনার সঙ্গে ফোনে কথা বললে তিনি ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। স্ত্রী বলেন, এক টাকা দিয়েও পদ নেবো না। এরপর মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে মিলিনার সঙ্গে আমার ফোনে চার মিনিট ১১ সেকেন্ড কথা হলে তিনি একইভাবে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি দিতে অস্বীকার করলে তিনি বলেন, টাকা ছাড়া কোনো পদ হবে না। বিষয়টি আমি জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি সঞ্চিতা হক রিক্তা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস ও সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলুকে জানালে তারা বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। পদের জন্য তিনি কেন টাকা দাবি করলেন আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আ্যাডভোকেট মিলিনা বলেন, ‘আমি একটি রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে। সম্মেলনে ব্যানার, মাইক, ডেকোরেশন, প্রায় ৫০০ মানুষের খাওয়ানো, গাড়ি ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে। এই খরচ সাধারণত প্রার্থীরাই খরচ করে থাকেন। তারা যদি ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করতে না পারেন তাহলে তারা নেতৃত্ব দেবেন কীভাবে? সম্মেলনের দিন সমস্ত খরচ উপস্থাপন করা হবে। কেউ বলতে পারবে না মিলি কমিটি বিক্রি করার জন্য টাকা চেয়েছে।’
জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি সঞ্চিতা হক রিক্তা বলেন, ‘ফেসবুকে অডিওর বিষয়টি আমিও দেখেছি। এ বিষয়ে মিলিনার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সম্মেলন করতে গেলে যারা প্রার্থী হয় খরচ-খরচা অনেকটা তারাই করেন। তবে তিনি ভুল করেছেন। ফোনে এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। যদি তিনি ব্যক্তিগতভাবে অর্থ দাবি করে থাকেন এবং তা প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কালিয়া পৌরমেয়র ওয়াহিদুজ্জমান হীরা বলেন, আমি মাছুরার পদের জন্য মিলিনার কাছে সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু ওই অডিওর বিষয়ে কিছুই জানি না।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে এসেছে। সম্মেলন হয়ে যাক, তারপর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাফিজুল নিলু/এসআর/এএসএম