রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের এক কমিটিতে ৭ বছর পার

সাইফুল উদ্দীন সাইফুল উদ্দীন রাঙ্গামাটি
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০২২
আব্দুল জব্বার সুজন ও প্রকাশ চাকমা

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রত্যেকটি জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর। রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের শেষ বার্ষিক সম্মেলন হয়েছে ২০১৫ সালের ২ জুন। সে সম্মেলনের সাত বছর পার হলেও আর নতুন কোনো কমিটির মুখ দেখেননি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

২০১৫ সালে জেলা সম্মেলনের পর কাউন্সিল ছাড়াই কেন্দ্রঘোষিত সুজন-প্রকাশ কমিটি এরইমধ্যে সাত বছর শেষ করে আট বছরে পা দিয়েছে। কমিটি ঘোষণার পর দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের পর সভাপতির নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার আলোচনায় আসা ছাড়া এই কমিটির অর্জন বলতে কিছুই নেই। বরং তাদের সময়েই রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে দুই গ্রুপের মারামারির পর গত চার বছর ধরে স্থগিত ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড, নেই কলেজ কমিটিও। গত আট বছরেও তারা করতে পারেননি রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ কমিটি।

এছাড়া জেলার ১০ উপজেলার বেশিরভাগ কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ, অনেকেই যুবলীগ-আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনে চলে গেলেও খালি পড়ে আছে ছাত্রলীগের পদ। জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পদের অধিকাংশ নেতাই বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন, অনেকে হয়েছেন সন্তানের বাবা। সরকারি চাকরি কিংবা উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজনীতির বাইরে চলে গেছে অনেকেই। পুরো জেলায় দৃশ্যত স্থবির ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড। অন্যদিকে, বহুধাবিভক্ত এই সংগঠনটি নিয়ে বিরক্ত ও বিব্রত রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও।

জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক তাজুল ইসলাম রাজু বলেন, একটি প্রজন্ম শেষ হয়ে গেছে সম্মেলনের আশায় আশায়। অনেকের বয়স চলে গেছে, অনেকে বিয়ে করে ফেলেছে, অনেকে জীবিকার তাগিদে চাকরি খুঁজে নিয়েছেন। এতে করে আমার অনেক ভাইদের নেতৃত্বের সুন্দর সুযোগও চলে গেছে।

তিনি বলেন, ঘর ঠিক থাকে নাকি অভিভাবকদের শাসনে, জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা যদি চাইতেন তাহলে অনেক আগেই সম্মেলন হতো। বহুবার সম্মেলন হবে এমনকী সম্ভাব্য তারিখও শুনেছি কিন্তু সেই সম্মেলন আর হয় না।

জেলা ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইকবাল আহমেদ তালুকদার রিজওয়ান বলেন, সংগঠন দৃশ্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এই জেলায়। কোথাও কোনো কমিটির মেয়াদ নেই। পুরো একটা প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখানে ছাত্রলীগকে পুনরায় গড়ে তুলতে অনেক কষ্ট হবে।

রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন টিপু বলেন, ২০১৮ সালেই আমাদের জেলা সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারপর চার বছরেও হলো না। এই ব্যর্থতায় দায় আমারও আছে। তবে আমি বরাবরই সম্মেলন চেয়েছি, এখনো চাই। আমি মনে করি, যত দ্রুত সম্মেলন হবে ততই সংগঠনের জন্য মঙ্গল হবে।

রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে হঠাৎ খবর পাই আগামী ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এ ক্ষেত্রে কখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আমাদের তারিখ দেয় সেটা তাদের ওপর নির্ভর করে। আমরা চেষ্টায় আছি।

এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতান্ত্রিক নিয়মে আগে বিভিন্ন উপজেলা ও অধস্তন ইউনিটের সম্মেলন হতে হবে, তারপর জেলা সম্মেলন। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা না করে কেউ গায়ের জোরে সম্মেলন চাইলে তো সম্মেলন হবে না।

আপনি সম্মেলন চান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, এটা আমার চাওয়ার বিষয় নয়। কেন্দ্র যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবে সব হবে। তবে এখন সম্মেলন করার পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই

কেন পরিবেশ নেই, এমন প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, আমার বিভিন্ন ইউনিটের কমিটির মধ্যে অনেকগুলোর বয়স আমাদের চেয়েও বেশি। আমার সেক্রেটারি প্রকাশ চাকমা আমাকে সহযোগিতা না করায় পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যার কারণে কমিটি করতে পারিনি। সেইসব কমিটিগুলো না করে তো সম্মেলন হতে পারে না।

তাহলে যদি গত সাত বছরের মতো আগামী আরও সাত বছর লাগে পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হতে তাহলে কী করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। আমার কী করার আছে।

তবে সভাপতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রকাশ চাকমা বলেন, সে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে তা সত্য নয়। আমাদের ছয়টি ইউনিটের সম্মেলন বাকি আছে। জেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলে এই ছয়টি সম্মেলন করতে ছয়দিন লাগবে। সে আসলে টালবাহানা করে সম্মেলন আটকাতে চাচ্ছে।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সুজন বলেন, আমার সঙ্গে সাংগঠনিক নানা বিষয়সহ সম্মেলনের বিষয়েও সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে। সে আমাকে বলেছে সম্মেলন চায়। সভাপতি যে সম্মেলন চায় না এটা তো আমিও বুঝিনি। সে অসুস্থতা ও ভারতে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয় বলেছিল এতদিন। এখন তো সম্মেলন না হওয়ার কোনো পরিস্থিতি নেই।

তিনি বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রে কথা বলবো। এরইমধ্যে সাত বছর পার হয়ে গেছে। এখন আর তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নয়, কর্মীদের প্রত্যাশা এবং কেন্দ্রের সিদ্ধান্তেই সম্মেলন হবে।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের জন্য আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার বলেছি। সেও সম্মেলন দিতে চায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বা বিশেষ কারও অনুরোধে রাঙ্গামাটির সম্মেলনের তারিখ দেওয়া হচ্ছে না বলে শুনেছি। এটা নিয়ে আমরাও বিব্রত।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমরা চিঠি দিয়ে নেত্রীকে (প্রধানমন্ত্রী) জানিয়েছি। দাদাও (রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার) বিষয়টি দেখছেন। দেখা যাক কী হয়। তবে রাঙ্গামাটিতে ছাত্রলীগ বলতে গেলে ধ্বংসই হয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সম্মেলনের বিকল্প নেই।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।