ময়মনসিংহে উৎপাদিত খাদ্যশস্যে চলবে দুই বছরের বেশি, ঘাটতি গমে
ময়মনসিংহ বিভাগে বাৎসরিক বিপুল পরিমাণ ধান-চালজাতীয় খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। গম ও ভুট্টার বিপুল পরিমাণ ঘাটতি রয়েছে। তবে গম-ভুট্টার আবাদে কৃষকদের আগ্রহী করার কথা জানিয়েছেন আঞ্চলিক কর্মকর্তা।
ময়মনসিংহ বিভাগে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার। এর থেকে মোট খাদ্য চাহিদা ১৮ লাখ ৬ হাজার ৩৭৮ মেট্রিক টন বাদ দিলে উদ্বৃত্ত থাকে ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪২ মেট্রিক টন।
জেলায় মোট খাদ্য চাহিদা ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭১ থেকে মোট উৎপাদন ১৯ লাখ ৯ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন বাদ দিলে মোট উদ্বৃত্ত থাকে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন।
বিভাগীয় কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট আউশ ধান উৎপাদন ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৯২ মেট্রিক টন, আমন ধান ২৫ লাখ ২০ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন, বোরো ধান ৪২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন। গম উৎপাদন ২৫ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ও ভুট্টা উৎপাদন ১ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৯ মেট্রিক টন।
ওই অর্থবছরে চালের উৎপাদন আউশ ৭৭ হাজার ৩২৮ মেট্রিক টন, আমন ১৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৩ মেট্রিক টন ও বোরো ২৮ লাখ ২২ হাজার ৩৬৩ মেট্রিক টন।
জনশুমারি অনুযায়ী বিভাগে জনসংখ্যা ১ কোটি ২২ লাখ ১৯ হাজার ৭১১ জন। জনপ্রতি খাদ্য চাহিদা ৪০৫ গ্রাম করে মোট খাদ্য চাহিদা ১৮ লাখ ৬ হাজার ৩৭৮ মেট্রিক টন। বছরে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন থেকে থেকে বীজ গো-খাদ্য বাবদ ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন বাদ দিলে থাকে ৪২ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। মোট খাদ্য উৎপাদন ৪২ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন থেকে মোট খাদ্য চাহিদা ১৮ লাখ ৬ হাজার ৩৭৮ মেট্রিক টন বাদ দিলে উদ্বৃত্ত থাকে ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪২ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে আউশ ধান উৎপাদন হয় ৭৮ হাজার ১৬২ মেট্রিক টন, আমন ধান ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৭ মেট্রিক টন, বোরো ধান ২৮ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩১ মেট্রিক টন। বছরে মোট ধান উৎপাদন ২৮ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩১ মেট্রিক টন।
বছরের চাল উৎপাদনের পরিমান, আউশ ৫২ হাজার ১০৮ মেট্রিক টন, আমন ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫৮ মেট্রিক টন, বোরো ১১ লাখ ৮৮৮ মেট্রিক টন। বছরে মোট চাল উৎপাদন ১৯ লাখ ৯ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন। এদিকে বছরে মোট গম উৎপাদন ৬ হাজার ৬৭৮ মেট্রিক টন।
গত জনশুমারি অনুযায়ী জেলায় মোট জনসংখ্যা ৫৩ লাখ ১৩ হাজার ১৬৩ জন। জনপ্রতি দৈনিক ৪৪২ গ্রাম করে মোট ৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন মোট খাদ্য চাহিদা। বছরে মোট ফসলের অপচয় ১১.৫০ শতাংশ করে ২ লাখ ১৯ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন। মোট খাদ্য চাহিদা ও মোট অপচয়ের পরিমাণ ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন।
এর মাঝে জেলায় অপচয়সহ খাদ্য চাহিদা মোট ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭১ থেকে মোট উৎপাদন ১৯ লাখ ৯ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন বাদ দিলে উদ্বৃত্ত থাকে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন।
জেলার সদর উপজেলার চর লক্ষ্মীপুরের ভাটিপাড়া এলাকার কৃষক সুমন বলেন, আমরা আগে গম চাষ করতাম। কিন্তু, এখন করি না। কারণ হলো, গম চাষ করলে বোরোর ফসল করা যায় না। গম চাষের চেয়ে, ধান চাষ করলে বেশি লাভ হয়। তাছাড়া গম চাষের জন্য কৃষি অফিসগুলো কোনো সহায়তা বা পরামর্শ দেয় না। সব মিলিয়ে এখন কৃষকদের মাঝে গম চাষের আগ্রহ কমে গেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
চর ঈশ্বরদিয়া মুন্সিবাড়ি এলাকার কৃষক কাশেম মিয়া বলেন, আমরা আগে গম চাষ করতাম। কিন্তু গম চাষ করলে বোরোর ফসল করা যায়। গমের চাইতে ধান চাষে লাভও বেশি। তাছাড়া কৃষি অফিসের লোকজন সঠিক সময় সঠিক পরামর্শ দেয় না, সহায়তা করে না। এতে আমাদের ক্ষতি হয়। তাই এখন গম চাষ করি না- বললেই চলে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ময়মনসিংহ মূলত ধান উৎপাদনকারী অঞ্চল। আমরা যদি দেশব্যাপী হিসাব করি। তাহলে বাংলাদেশের ১৪টি অঞ্চলের মধ্যে বৃহৎ ধান উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি ময়মনসিংহ। এই বিভাগে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ মানুষের বসবাস।
তিনি বলেন, আমাদের সারা বছর ধান, গম ও ভুট্টাসহ উৎপাদন হয় ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন, যা থেকে গো-খাদ্য ও বীজসহ বাদ দেওয়া হয় ৫ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের বিভাগে চাহিদার বিপরীতে ২৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে, যা দিয়ে অন্য একটি অঞ্চল চলবে। এ কারণে আমাদের অঞ্চল নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, বোরো মৌসুমে ২৮ এবং ২৯ জাতের ধান উৎপাদন বেশি ছিল। কিন্তু এখন ফলন কমে যাচ্ছে। এই বছর আমরা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে ২৮ জাতের পরিবর্তে ৮৮ এবং ২৯ এর পরিবর্তে ৮৯ জাতের ধান রোপণ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। যদি ৮৮ ও ৮৯ জাত রোপণ হয় তাহলে বিঘাপ্রতি ৩০ মণ ধান উৎপাদন সম্ভব।
আশরাফ উদ্দিন বলেন, সরকারেরও টার্গেট যে ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশে যদি যেতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের আয় বাড়াতে হবে। আয় বাড়াতে হলে কৃষক যারা আছেন তাদের কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া কোনো গতি নেই।
তিনি বলেন, ধান উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের আরও একটা লক্ষ্য আছে। তা হলো, তেলের উৎপাদন বাড়ানো। আমাদের চাহিদার ১২ শতাংশ তেল দেশে উৎপাদন হয়। সরকার চাইছে তেল উৎপাদন করে তা ৪০ শতাংশে আনতে। যে কারণে আমরা সরিষা আবাদে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের এই অঞ্চলে যে পরিমাণ সরিষার আবাদ হয়। তার থেকে ৪ থেকে ৫ শতাংশ আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে আমরা আশা করছি এবং এটা সম্ভব হবে।
এসএইচএস/জিকেএস