নিহত বুয়েটছাত্র ফারদিনের মা
আজ দেখবে, কাল কেস হবে, পরশুদিন বেরিয়ে চলে যাবে
‘আমার সন্তানটা হারিয়ে গেছে। আজ দেখবে, কাল কেস হবে, পরশুদিন বেরিয়ে চলে যাবে। এই হচ্ছে বিচার। যে কারণে কয়েকদিন পর পর একেকজনের বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যায়। তা নাহলে কারও সাহস ছিল না আবরার মারার পর বুয়েটের কোনো বাচ্চার শরীরে হাত তোলা।’
মরদেহের কিছু দূরেই অটোরিকশায় বসে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিহত শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মা ফারহানা ইয়াসমিন।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে ফারদিনের মরদেহ দাফন করা হয়।
দাফনের আগে মরদেহ নামানোর সময় কিছুটা দূরে একটি অটোরিকশায় বসা ছিলেন তার মা ফারহানা ইয়াসমিন। অটোরিকশায় বসেই তিনি তার ছেলের জন্য কান্না করতে করতে চোখের পানি ফেলছিলেন।
সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে বনানী ঘাট সংলগ্ন লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলের পেছনে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসমান অবস্থায় ফারদিনের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
ফারদিন নারায়ণগঞ্জের দেলপাড়া কুতুবপুরের নয়ামাটি এলাকার কাজী নুরুদ্দীন রানার ছেলে। তিনি ঢাকার ডেমরার শান্তিবাগ কোনাপাড়া এলাকায় থাকতেন। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন ফারদিন।
কান্না করতে করতে ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘বুয়েটের বাচ্চাকে হত্যা করেছে, এত কলিজা কাদের আছে তাদের খুঁজে বের করা হোক। আমার কলিজার টুকরা চলে গেছে। আমার সোনামণি চলে গেছে। কারও কিছু আসে যায় না। পরশ আমার বড় সন্তান ছিল। সেই আমার অন্য সব সন্তানের পথপ্রদর্শক ছিল। জীবনে কোনো ক্লাসে সে দ্বিতীয় হয় নাই। সবসময় সে প্রথম হতো। পরশ আমার ঘরের আলো ছিল। আমার আলো চলে গেলো। কার কাছে গেলে আমি আমার সন্তানকে খুঁজে পাবো?’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে ফারদিনের মা বলেন, ‘আমার দাবি কি পূরণ করতে পারবেন আপনারা? আমার সন্তান তিনদিন ধরে নিখোঁজ। আপনারা তো খুঁজে আনতে পারেন নাই। আপনাদের কী বলবো? আপনারা তো শুধু বলেই চলে যান।’
ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শেখ ফরহাদ বলেন, বুয়েটছাত্র ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথায় ও বুকে অসংখ্য আঘাত পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত বলা যাবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান মানিক বলেন, ফারদিন গত ৪ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন তার বাবা কাজী নুরুদ্দিন রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন ছিল।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/এমএস