শীতবস্ত্র কেনাবেচায় সরগরম নয়ারহাট, প্রতিদিন বিক্রি ২ কোটি
জমতে শুরু করেছে গাইবান্ধার নয়ারহাট। এ বাজারে প্রতিদিন ভিড় করছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শত শত পাইকার। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এখানে প্রতিদিন দুই কোটি টাকার শীতবস্ত্র বেচা বিক্রি হয়। তবে ব্যবসায়ীদের আশা শীত মৌসুমে এবার বেচাকেনা ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের পেপুলিয়া গ্রামের একটি কারখানায় শীতবস্ত্র তৈরি শুরু করেন নয়া মিয়া সরকার। তার দেখাদেখি বর্তমানে ওই এলাকায় শতাধিক কারাখানায় শীতবস্ত্র তৈরি করছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তরা। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা ছোট্ট বাজারটি এখন দেশব্যাপী পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, দেশ ভাগের পর মাড়োয়ারিদের কাছ থেকে পাওয়া হস্তচালিত দুটি যন্ত্র দিয়ে শুরু কোচাশহরের হোসিয়ারি শিল্পের যাত্রা। তারপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের পর গ্রামে। বগুড়ার আদমদীঘী উপজেলার শাওইল থেকে নিয়ে আসা ঝুটের সুতা এখানকার অন্যতম প্রধান কাঁচামাল। সেই হোসিয়ারি শিল্পে এখন পরিবর্তন এসেছে। অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা রকমের শীতবস্ত্র।
শতাধিক কারখানায় চায়না থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে শীতবস্ত্র। পেপুলিয়া কানাইপাড়া, মুকন্দপুরসহ কোচাশহর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত পণ্য চলে যায় নয়ারহাটে। সেখানে তিন শতাধিক শো-রুম থেকে পাইকারদের হাত ঘুরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায় শীতবস্ত্র।
এখানকার বিভিন্ন কারখানা সোয়েটার, কার্ডিগেন, মোজা, মাফলার, টুপি, টু-পিস, ত্রি-পিস, চাইনিজ সেটসহ অন্তত ১০০ ধরণের শীতবস্ত্র তৈরি হয়। হাটে সারাদেশের পাইকারদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। বেচাকেনাও হচ্ছে ভালো। প্রতিদিন দুই কোটি টাকা বিক্রি হচ্ছে এখানে। হাট এলাকায় কোনো ব্যাংকের শাখা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। ফলে তাদের অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে লেনদেন করতে হয়।
বর্তমানে অত্যাধুনিক মেশিনে এখানকার তৈরি শীতবস্ত্র যে কোনো দেশের পোশাকের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন লাবিব হোসিয়ারির মালিক তরিকুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়া এ উদ্যোক্তা জাগো নিউজকে বলেন, এ এলাকার শতাধিক কারখানায় অত্যাধুনিক মেশিনে তৈরি শীতবন্ত্র রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের নামকরা শো রুমে বিক্রি হচ্ছে।
মেসার্স তালুকদার হোসিয়ারির মালিক তছলিম তালুকদার বলেন, কোচাশহর থেকে নয়ারহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মালামাল বহন করতে হয়।
বেবি হোসিয়ারির মালিক আমিনুর রহমান বলেন, এখানে কোনো ব্যাংকের শাখা নেই। লেনদেন করতে সমস্যা হয় আমাদের। পাইকাররা যখন আসে তখন লেনদেন হয়। তাছাড়া কোনো উপায় নেই।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার অঙ্গ আবরণী গার্মেন্টসের মালিক ইউসুফ তালুকদার বলেন, শীতবস্ত্র কিনতে প্রতি বছরই আমি এখানে আসি। মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই, যাতায়াতেও অনেক সমস্যা। কিন্তু ব্যবসার জন্য আসতে হয়।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর কান্তা গার্মেন্টসের মালিক মাসুদ রানা বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা ও আতিথেয়তা সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। তবে দিন বা রাতের বেলায় এখানে টাকা-পয়সা নিয়ে আসতে ভয় লাগে। রাস্তার কারণে বড় গাড়ি আসতে না পারায় মালামাল ভ্যান বা ছোট পিকআপে করে কোচাশহরে নিতে দ্বিগুণ খরচ ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
নয়ারহাট হোসিয়ারি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান সরকার বলেন, বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও গোবিন্দগঞ্জ-কোচাশহর সড়কটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া বিদ্যুৎ সমস্যার পাশাপাশি কোনো মোবাইল ফোনের টাওয়ার না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, নয়ারহাটে ব্যাংকের শাখা নিয়ে আসাসহ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এ কুটির শিল্পকে বাঁচাতে এখানকার প্রয়োজনীয় রাস্তাগুলি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরএইচ/জেআইএম