কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তার ছেলে।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম ইন্তাজ আলী শেখ (৪৮)। রোববার (২৩ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ইন্তাজ আলী শেখ ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম লালুর অনুসারী ছিলেন। তামাক ও বিড়ি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ইন্তাজ আলী।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২২ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে ইন্তাজ আলী তার ছেলে শাকিলকে (২৫) সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়িক কাজ শেষে ধরমপুর ইউনিয়নের মহিষাডোরা গ্রামে তার নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। বাড়ির গেটের সামনে পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত তাদের ধরে হাতুড়ি, রড, লাঠিসোটা দিয়ে মারপিট করতে করতে রাস্তায় নিয়ে আসে। সেখানেও তাদের বেধড়ক মারপিট করা হয়। একসময় তারা নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মৃত ভেবে দুর্বৃত্তরা তাদের সেখানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেন। অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাত ১০টার দিকে ইন্তাজ আলী শেখের মৃত্যু হয়।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা ইন্তাজ আলী শেখ ও তার ছেলেকে মারপিটের ঘটনায় পরের দিন ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। ইন্তাজ আলীর ভাই রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এখন ইন্তাজ আলী শেখ নিহত হওয়ায় নতুন করে হত্যা মামলা করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি।
ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম লালু অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন দল থেকে বহিরাগতদের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে ভেড়াচ্ছেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ। যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজের শেল্টারে থাকা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীরাই ইন্তাজ আলী শেখের মতো ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ নেতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
ইন্তাজ আলী ধরমপুর ইউনিয়নের মহিষাডোরা গ্রামের মৃত মোন্তাজ আলী শেখের ছেলে। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী সাহাবুল আলম লালুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ইন্তাজ আলী। লালু এই ইউনিয়নের পরপর দুইবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে সাহাবুল আলম লালু মাত্র ৫০০ ভোটের ব্যবধানে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজের ভাই শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন। নির্বাচনে সাহাবুল আলম লালুর পক্ষে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা নিয়ে প্রতিপক্ষের বিরাগভাজন ছিলেন ইন্তাজ আলী।
বাড়ির সামনের একটি জায়গার দখল নিয়েও ইন্তাজ আলী শেখের সঙ্গে কয়েকজনের বিরোধ চলে আসছিল। ইন্তাজ আলী দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টার পরও ওই জমির দখল পাচ্ছিলেন না। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভেড়ামারা থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, কারা কী উদ্দেশ্য এই হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। আশা করছি খুব শিগগির হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যাবে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
আল-মামুন সাগর/এসআর/এএসএম