মোবাইলের জনপ্রিয়তায় কমেছে টেলিফোনের ব্যবহার
সহজলভ্যতা, পরিবহন, বিনোদন ও মুহূর্তেই খবরাখবর জানতে মোবাইল ফোনের জুড়ি নেই। ফলে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ফোন। অন্যদিকে সময়ের গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের জনপ্রিয় একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম টেলিফোন।
জানা যায়, ১৮৮৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা শহরে প্রথম টেলিফোন ব্যবহার শুরু করেন নবাব আহসান উল্লাহ। ১৮৮৩ সালে টেলিফোনের যাত্রা শুরু হলেও দেশ স্বাধীন পরবর্তী ১৯৭৮ সালে হাতেগোনা কয়েকটি পিবিএক্স সংযোগ দিয়ে টেলিফোনের যাত্রা শুরু হয় বান্দরবানে।
পরে অভিজাত পরিবারের আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেও শোভা পেত এই টেলিফোন। সে ঐতিহ্যে অনেকটাই ভাটা পড়েছে মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তার কারণে।
আরও পড়ুন: জেলায় খোলা থাকলেও উপজেলা অফিসে ঝোলে তালা
বাড়িঘরে টেলিফোনের ব্যবহার কমার পাশাপাশি কমেছে অফিসপাড়ায়ও। এক সময় অফিস-আদালতে জরুরি বার্তা আদান-প্রদানে টেলিফোনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন কর্মকর্তারা। তবে সেটাও এখন তুলনামূলক কমে গেছে। একটি অফিসের যে কোনো তথ্য আদান-প্রদানে কর্মকর্তারা এখন মোবাইল ফোন ব্যবহারেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
টেলিফোন লাইনেই মিলবে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা-ছবি জাগো নিউজ
আরও পড়ুন: অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও মোবাইল ফোনে না রাখাই ভালো
বান্দরবান কৃষি ব্যাংকের দ্বিতীয় কর্মকর্তা অং থোয়াই চাক জানান, এক সময় এই অফিসের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ল্যান্ডফোন। এখন মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হওয়ায় অধিকাংশ কাজ মোবাইলের মাধ্যমে সারেন বলে জানান তিনি।
হোটেল হিল্টনের ম্যানেজার তপন কান্তি বড়ুয়া জানান, টেলিফোন সংযোগ থাকলেও অধিকাংশ সময় সমস্যা থাকে এটিতে। ফলে অধিকাংশ গ্রাহক মোবাইল কিংবা অনলাইনে যোগাযোগ করেন।
হোটেল হিল ভিউ’র ম্যানেজার তৌহিদ পারভেজ জানান, কিছু বছর আগেও যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল টেলিফোন।
বান্দরবানে টেলিফোন বেশি ব্যবহার হয় অফিস-আদালতে-ছবি জাগো নিউজ
মোবাইল নেটওয়ার্ক আসায় কিছুটা মোবাইলনির্ভর হয়ে পড়েছে। বিটিসিএল সংযোগ থাকলেও তিন মাসের অধিক সময় ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তাদের শত বলার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। অথচ প্রতি মাসে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চুরি হওয়া মোবাইল যার কাছে পাওয়া যাবে তারও হতে পারে সাজা
বান্দরবান বিটিসিএল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলার ছয়টি উপজেলায় ১ হাজার ১২৩ জন গ্রাহক টেলিফোন ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯৬২, লামায় ৪৬, আলীকদমে ৫৫, রোয়াংছড়িতে ২০, রুমায় ২১ ও থানচিতে ৯ জন গ্রাহক রয়েছেন। তবে এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন অফিস-আদালতের কাজে ব্যবহারের জন্য সংযোগ নেওয়া হয়েছে। বাসাবাড়িতে সংযোগ থাকলেও সেটা সংখ্যায় অনেক কম।
এছাড়া জেলায় কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে বিটিসিএল দপ্তরে ২০ জন কর্মরত। এর মধ্যে সদর উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ১১ জন, রোয়াংছড়ি, রুমা ও লামায় ছয়জন, আলীকদম ও থানচিতে দুজন কর্মরত।
টেলিফোন ভবনে জনবল সংকট সব খানেই-ছবি জাগো নিউজ
এদিকে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার পর থেকে টেলিফোন ছেড়ে মোবাইলের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
বান্দরবান গ্রামীণফোন সেন্ট্রাল ম্যানেজার আজাহারুল ইসলাম জানান, বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় গ্রামীণফোনের গ্রাহক প্রায় ৩৩ হাজার।
বান্দরবান টেলিটক অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার প্রমোদ বড়ুয়া জানান, চার উপজেলায় ৫৫ হাজার গ্রাহক আছেন টেলিটকের।
বান্দরবান রবি ও এয়ারটেলের সেলস ম্যানেজার মো. আইনুল মারজান জানান, জেলায় রবি গ্রাহক প্রায় ৮০ হাজার এবং এয়ারটেল রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোনের জালে বন্দি শৈশব
বান্দরবান বিটিসিএল কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির তিনি জাগো নিউজকে জানান, জেলায় প্রথমে সিভি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ব্যবহার শুরু হলেও প্রযুক্তি আধুনিক হওয়ায় পরে ইএমডি প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে আসছিল। এখন আরও আধুনিক হয়ে এমওটিএন প্রযুক্তির কার্যক্রম চলছে। এ প্রযুক্তির সব কাজ সম্পন্ন হলে গ্রাহক ইচ্ছা অনুযায়ী দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা (এমবিপিএস) নিতে পারবেন। এনিয়ে জেলায় কর্মরতরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
টেলিফোন বা ল্যান্ডলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, যোগাযোগের জন্য টেলিফোন বা বিটিসিএলের মতো এত কম মূল্যে কোনো কোম্পানিই সেবা দিতে পারে না। বিটিসিএল থেকে মোবাইলে ৬০ পয়সা মাত্র এবং বিটিসিএল থেকে বিটিসিএল সম্পূর্ণ ফ্রি। শুধু ১৫০ টাকা মাসিক সার্ভিস চার্য দিয়ে পুরো মাস কথা বলা যায়। তবে এই টেলিফোন সংযোগ পরিবহন করা না যাওয়ায় ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এটি।
নয়ন চক্রবর্তী/এসএইচএস/জেআইএম