আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, হাসপাতালে মশারি ব্যবহার ঢিলেঢালা
সারাদেশে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। হাসপাতালগুলোর ডেঙ্গু ইউনিটে রোগীর চাপ বাড়ছে। বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। কিন্তু ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনার পাশাপাশি অভাব রয়েছে জনসচেতনতাও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত দেশের ১০টি জেলা ছাড়া সব জেলাতেই ডেঙ্গুরোগী পাওয়া গেছে। তবে কীটতত্ত্ববিদেরা মনে করেন, এডিস মশা রয়েছে দেশের সব জেলাতেই।
এ পরিস্থিতিতেও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিটগুলোতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীরা দিনের বেলায় মশারি ব্যবহার করছেন না। তারা বলছেন, দিনে মশার উপদ্রব কম। কিন্তু অন্য অনেক রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ডেঙ্গুরোগীরা সবসময় মশারি ব্যবহার না করলে এতে আশপাশে থাকা অন্যদেরও দ্রুত আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্বজনরা এ নিয়ে নিজেদের আতঙ্কের কথাও বলছেন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর চাপ প্রতিদিন বাড়ছে। নিবিড় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ১২টি বেডে পৃথক ইউনিট চালু করেছে কর্তৃপক্ষ। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলার পশ্চিম দিকে ১২টি বেডে ডেঙ্গু ইউনিট চালু রয়েছে। বর্তমানে সেখানে ১১ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চলতি মাসের শুরুতে চালু হওয়া এ ইউনিটে চিকিৎসা নিয়ে এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক ডেঙ্গুরোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
হাসপাতালটিতে প্রতিদিনই জেলা শহরের শহরতলী এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলো থেকে আক্রান্ত ডেঙ্গুরোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসছেন। এমনকি অন্য জেলার রোগীরাও এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সদর উপজেলার বাউকাঠি এলাকার যুবক সুমন ইসলাম ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় জ্বর আসে তার, সঙ্গে শরীর ব্যাথা। সুস্থ হতে বাড়িতে এসে মাথায় পানি দিয়ে জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। তখন তার বারবার বমি হচ্ছিলো। গত শুক্রবার দুপুরে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ল্যাবে তার একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টে তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। বর্তমানে তিনি সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।
রাজাপুর উপজেলার পিংড়ি গ্রামের মধ্যবয়সী মিনারা বেগম ঢাকায় মেয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। কয়েকদিন পর গ্রামে ফিরলে শরীরে জ্বর জ্বর অনুভব হয়। গত শুক্রবার সকালে রাজাপুরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তিনি ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ওইদিন বিকেলেই ভর্তি হন। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের অনেকের অভিযোগ, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা অনেকে দিনে মশারি ব্যবহার করেন না। এতে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে। এ নিয়ে আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন রোগীর স্বজনরা।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মেহেদী হাসান সানি জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিক ধাপে ডেঙ্গু শনাক্ত হলে দ্রুত সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপে শনাক্ত হলে আক্রান্তের ধরন অনুযায়ী রোগীর সুস্থ হতে সময় লাগে। এখন কারও জ্বরের সঙ্গে শরীরের জয়েন্টে ব্যথা কিংবা র্যাশ দেখা দিলে অথবা সেই সাথে ঘন ঘন বমি হলে তাকে দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। প্রাথমিক ধাপে থাকা অবস্থায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে রোগী দ্রুত সেরে ওঠেন। কিন্তু বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে দ্বিতীয় ধাপে চলে গেলে সেরে উঠতে সময় লাগে।
তিনি আরও বলেন, অনেকের জ্বর হলে এখনো করোনা মনে করে। ডেঙ্গু ও করোনার জ্বরেরও পার্থক্য রয়েছে। ডেঙ্গুর জ্বর করোনার তুলনায় উচ্চমাত্রার হয়। সন্দেহ হলে দুটি পরীক্ষাই করাতে হবে।
এ বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গুরোগীর প্রকোপ বেশি। পৌর এলাকার ড্রেনে কর্তৃপক্ষ ক্রাশ প্রোগ্রাম করার পরও মশা নিধন সম্ভব হয়নি। ময়লা-আবর্জনার মধ্যে পানি জমে সেখানে ডেঙ্গু মশা প্রজনন করে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই মনে করেন স্বাস্থ্য ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞরা।
ডা. মেহেদী হাসান জানান, হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীদের কেউ কেউ বলছেন, দিনে মশারি টানালে বাতাস কম লাগে, গরম বেশি লাগে। এছাড়া দিনে মশাও রাতের তুলনায় অনেক কম থাকে। এজন্য রোগীরা দিনে মশারি ব্যবহার করতে চায় না। তবে হাসপাতালে মশারি ব্যবহারের বিষয়ে রোগীদের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তা শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ডেঙ্গুরোগীদের জন্য পৃথক ইউনিট চালু করা হয়েছে। সেখানে সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে ইউনিটে শয্যা বাড়ানো হবে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন রোগীরা
আতিকুর রহমান/এমকেআর