লালন ভক্তে মুখর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি
দেশ-বিদেশ থেকে আসা হাজারও ভক্তে এখন মুখরিত কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া আখড়াবাড়ি। লালন সাঁইজির ১৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে ফকির-বাউল, গুরু-শিষ্য, ভক্ত আর দর্শনার্থীদের আনন্দ-উল্লাসে পুরো এলাকা মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। লালন মঞ্চে সোমবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই উৎসব শেষ হবে বুধবার। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আখড়াবাড়ি সংলগ্ন কালীগঙ্গা নদীর মাঠে লালন মঞ্চে আলোচনা সভা ও লালন সংগীত পরিবেশিত হয়।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণোৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মুনসুর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, পৌর মেয়র আনোয়ার আলী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মো. মনিরুজ্জামান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান প্রমুখ।
এদিন প্রধান আলোচক হিসেবে লালন দর্শনের আলোকে বক্তব্য দেন লালন একাডেমির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুর রশীদ চৌধুরী। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের আলোচনা শেষে লালন একাডেমি ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সংগীত পরিবেশিত হয়।
তবে প্রচলিত আনুষ্ঠানিক আয়োজনের বাইরেও লালনের তিরোধান দিবস ঘিরে ভক্তরা নানা আয়োজন করেন। মঙ্গলবার সকালে বাল্যসেবা গ্রহণের মধ্যদিয়ে নিজেদের ঘরানায় ছোট ছোট মজমা করে আত্মস্থ বাণীগুলো একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করেন ভক্ত-সাধুরা। দোতরা হাতে লালন শাহর মাজার মিলনায়তনে আসর জমিয়েছেন আগত ভক্ত বাউল অনুসারীরা। সহস্রাধিক উৎসুক দর্শক শ্রোতা কেউবা বসে কেউবা দাঁড়িয়ে শুনছেন এসব গান।
বিপুল মানুষের এই সমাগম কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়িতে থাকবে আরও দুদিন। করোনার কারণে গত দুই বছর সাঁইজির চরণে ভক্তি দিতে না পারলেও এবার উৎসবে অংশ নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করছেন বাউলরা। লালনের মত-পথ-নির্দেশনা সব ছিল মানুষের কল্যাণে। সঙ্গীতের মাধ্যমে তার সেই দর্শনকে জানা এবং ভক্তি নিবেদন করে মুক্তির আকাঙ্ক্ষার কথা জানালেন উৎসবে যোগ দেওয়া ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।
ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে বাংলা ১২৯৭ সনের ১ কার্তিক মারা যান। পরে এখানে লালন মেলার আয়োজন শুরু করে লালন একাডেমি।
আল-মামুন সাগর/এমআরআর/এএসএম