কাঁদলেন শামীম ওসমান

অডিও শুনুন
নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত তৃতীয় সেতু (নামকরণ করা হয়েছে ‘নাসিম ওসমান সেতু’) উদ্বোধন করার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন একে একে ওসমান পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের অনবদ্য অবদানের কথা স্মরণ করছিলেন তখন আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখে জল ঝরিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
সোমবার (১০ অক্টেবার) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের নাসিম ওসমান সেতুর উদ্বোধন করতে গিয়ে তাদের কথা স্মরণ করেন। এ সময় শামীম ওসমান আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝরতে থাকে। তার পাশে থাকা নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু টিস্যু এগিয়ে দেন। কয়েকবার টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছতে দেখা যায় শামীম ওসমানকে।
ওসমান পরিবারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নাসিম ওসমান শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন। তার বাবা জোহা সাহেব আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। তাদের দাদা ওসমান আলী সাহেব আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও সংগঠনে ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৭১ সালে ধানমন্ডিতে ১৮ নম্বর রোডে আমার মাসহ আমরা সবাই বাসায় বন্দি ছিলাম। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারেন্ডার করার পরও আমরা মুক্তি পাইনি। কিন্তু জোহা সাহেব ভেবেছিলেন আমরা বোধহয় মুক্তি পেয়েছি। ওই সময়ে জোহা সাহেব আমাদের বাসার রাস্তা দিয়ে ঢোকেন। তখন পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের বাসা লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়ে। তার শরীরে গুলি লেগেছিল। কিন্তু তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। ৭৫-পরবর্তী সময়ে আমরা রিফিউজি হিসেবে দিল্লিতে ছিলাম। তখন জোহা সাহেব গ্রেফতার হয়ে বন্দি ছিলেন। তিনি মুক্তি পেয়েই প্রথমে দিল্লি ছুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। সেইসব কথা আমরা স্মরণ করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালো রাত্রি। আগেরদিন ১৪ আগস্ট রাতে নাসিম ওসমানের বিয়ে হয়। নাসিম ওসমানের বিয়েতে কামালও (শেখ কামাল) গিয়েছিল। কামাল ফিরে আসে। যখনই নাসিম ওসমান শুনেছেন ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটেছে তখনই নবপরিণিতা স্ত্রীকে রেখেই হত্যার প্রতিবাদ জানাতে চলে গিয়েছিলেন ভারতে। সেখানে তিনি হত্যার প্রতিবাদ করেন। আমি সবসময়ে সেগুলো স্মরণ করি।’
তিনি বলেন, ‘যদিও তিনি আমাদের পার্টি করতেন না অন্য পার্টিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সবসময় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, বড় বোন হিসেবে সম্মান করতেন। তিনি বারবার আমার সঙ্গে দেখা করে সেতুটির কথা বলেছিলেন। যখন আমরা এটার কাজ শুরু করি তখনই তিনি চলে গেছেন। তিনি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। তাকে স্মরণ করতেই তার নামে সেতুটির নাম করেছি।’
উদ্বোধন শেষে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘এখানে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি প্রমাণ করে মানুষের আগ্রহ। জাতির পিতার কন্যার অভিপ্রায় হচ্ছে একদিন আগেও যদি সেতু চালু হয় মানুষ একদিন আগেই সুবিধা পাবে। পদ্মা সেতু হয়ে এই সেতু দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে। এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। এটি দিয়ে মদনপুর এবং পূর্বাঞ্চলে যাওয়া যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু সেতুই নয়, নারায়ণগঞ্জে জাতির পিতার কন্যা যে পরিমাণ কাজ করেছেন তাতে নারায়ণগঞ্জবাসী চিরকৃতজ্ঞ। সবকিছু মিলিয়ে আমরা এমন একটি স্থানে এসে পৌঁছেছি এভাবে চললে নারায়ণগঞ্জ ঢাকার থেকেও উন্নত হবে। আল্লাহর রহমতে এটি হয়েছে। আরেকটি হবে নবীগঞ্জ এলাকা দিয়ে। এই সেতুটির স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমান।’
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/এএসএম