দালালের খপ্পরে সৌদি গিয়ে নির্যাতনের শিকার তরুণী, ফিরে আসার আকুতি
হবিগঞ্জের মাধবপুরের এক তরুণী (২৬) দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়ে অমানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। ইমোতে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন ওই তরুণী।
তাকে উদ্ধারে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) বরাবর চিঠি দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সারওয়ার আলম সই করা এক পত্রে জরুরিভিত্তিতে তাকে উদ্ধার করে দেশে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সারওয়ার আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ওই তরুণী সৌদি আরবে যান ৯-১০ দিন আগে। এখন তিনি ফিরে আসতে চাইছেন। তাকে সেফ হোমে নিয়ে আসার জন্য সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে একটি পত্র দেওয়া হয়েছে। আমি আজ (বৃহস্পতিবার) রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবস্থাপককে ডেকে বলেছি তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। তারা বলেছেন, সাতদিনের মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। তবে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে মনে হয়নি যে তিনি খুব নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেছেন সমস্যা নেই। যে কেউ তাকে নিয়ে আসলেই হবে। এখন তিনি মোটামুটি ভালো আছেন।
তরুণীর বাবার অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়েকে রিয়াদে একটি নির্জন স্থানে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এখন দালাল কাশেম কোনো দায়িত্ব নিতে চান না।
তরুণীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর চুনারুঘাট উপজেলার আমতলী এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম ঢাকার শান ওভারসিজ নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তাকে সৌদি আরবে পাঠান। তার বাড়ি মাধবপুর উপজেলায় হলেও প্রতারণার মাধ্যমে দালাল চক্রটি পাসপোর্টে ঠিকানা লেখে নবীগঞ্জ উপজেলায়। রোববার (২ অক্টোবর) তরুণীকে উদ্ধারের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় সাংবাদিক মুজাহিদ মুসি।
সৌদি যাওয়ার পর ইমোতে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্যাতনের বর্ণনা দেন ওই তরুণী। তিনি বলেন, ‘বাবা, আমি আর নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না। আমাকে উদ্ধার করো। দেশে আনার ব্যবস্থা করো, না হয় আমি এখানেই মারা যাবো।’
তরুণীর বিদেশে যাওয়ার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, তার বাড়ি মাধবপুর উপজেলার কমলপুর গ্রামে। এ ঠিকানা তার হেলথ কার্ডসহ নানা কাগজপত্রে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পাসপোর্টের ঠিকানায় নবীগঞ্জ উপজেলার দিঘলবাক উল্লেখ আছে। পাসপোর্টে দেওয়া জন্মতারিখ অনুযায়ী তার বয়স ২৬ বছর।
রিক্রুটিং এজেন্সি শান ওভারসিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুইটি আক্তার বলেন, ‘কাশেম নামের এক লোক ওই তরুণীকে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। তিনি সৌদিতে যাওয়ার পরই জানান, সেখানে তার কাজ ভালো লাগে না। তিনি নিজে থেকেই থাকতে চান না। তার পরিবার চাইলে আমরা তাকে দেশে আনার চেষ্টা করবো।’
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, এ ঘটনা জানার পর দালাল কাশেমকে ডেকে আনা হয়েছিল। কাশেম তার মাধ্যমে মেয়েটিকে সৌদিতে পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন। মেয়েটিকে দেশে ফেরত নিয়ে আসতে তাকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসআর/এএএইচ/জেআইএম