কারা আসছেন নরসিংদী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে?
দীর্ঘ সাত বছর পর শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নানামুখী জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। শুধু তাই নয়, জেলা স্টেডিয়ামসহ পুরো শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের অভ্যর্থনা জানাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর অংশে ১৬৩টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, টানা সাড়ে ১৩ বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালে জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের সবকটিতে জয়লাভের মধ্যদিয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থানের জানান দেয় দলটি। সম্প্রতি দলের মধ্যকার দুটি পক্ষের ব্যক্তিগত আক্রোশ, পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ, আলাদা দলীয় কর্মসূচি পালনসহ নানা কারণে জেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রকাশ্যে। এর প্রভাব তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপরও পড়েছে।
সম্মেলনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নরসিংদীর রাজনীতি। বিবদমান দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ করছে। শুধু তাই নয়, ফেসবুকেও এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিপক্ষে ছড়াচ্ছে কুৎসা। দুই ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগের এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (বীর প্রতীক)। অন্যদিকে রয়েছেন সাবেক পৌরমেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দখলে নিয়ে মরিয়া বিবাদমান দুটি পক্ষ।
অন্যদিকে নরসিংদীর ছয়টি উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে জেলার শীর্ষ পদে কে আসছেন তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্বন্দ্বের অবসান হবে, নাকি তা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে তা নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
সম্মেলনের দিন সংঘাতেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পরিচ্ছন্ন ও যোগ্য নেতৃত্বের মধ্যদিয়ে দলের চলমান সংকট নিরসন চান দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
শীর্ষ দুই পদের জন্য লড়ছেন এক ডজনেরও বেশি নেতা। সভাপতি পদে চলছে বর্তমান ও সাবেকের লড়াই। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব চাচ্ছেন ভারমুক্ত হতে। আর সাবেক সভাপতি সদরের এমপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু চাচ্ছেন পুরোনো পদ ফিরে ফেতে।
সভাপতি পদে আরও লড়ছেন নরসিংদী-৩ আসনের এমপি জহিরুল হক ভূইয়া মোহন, নরসিংদী-২ আসনের সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খাঁন পোটন ও নরসিংদী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ার।
সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, কার্যনির্বাহী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী, নরসিংদী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সাবেক সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূইয়া, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূইয়া, শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকার, কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভূইয়া, নরসিংদী জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল ইসলাম। নবীণ ও প্রবীণের এই লড়াইয়ে প্রত্যেকেই দলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তত বলে জানিয়েছেন তারা।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
সম্মেলন সফল করতে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব।
এসআর/জেআইএম