বৃত্তি পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা আদায়
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বৃত্তি পরীক্ষার নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৫০ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা সদরের পুষ্টকামুরী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শরফুন নেছা খানম এ টাকা আদায় করছেন। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলের টিচার্স ফাউন্ডেশন মির্জাপুরে বৃত্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। ২৩ অক্টোবর মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে পুষ্টকামুরী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শরফুন নেছা খানম টাঙ্গাইলের টিচার্স ফাউন্ডেশনের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মো. আতোয়ার রহমান খান ও ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত বৃত্তি পরীক্ষার ফরম বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করছেন। শুধু তার বিদ্যালয়েই নয়, তিনি উপজেলার সুতানরি ও কান্ঠালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও এ ফরম বিক্রি করছেন।
পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম বাবদ প্রধান শিক্ষিকা নিজেই ১৫০ টাকা করে আদায় করছেন। তবে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ জানে না।
সরকারের নির্দেশে করোনাকাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি ও সমাপনীসহ সব পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। এরপরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃত্তি পরীক্ষার নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি পৌর শহরজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘বিশেষ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়। কিন্তু বৃত্তি দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের একাংশকে বৃত্তি দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।
এ বিষয়ে পুষ্টকামুরী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শরফুন নেছা খানম বলেন, ‘প্রতি বছর টিচার্স ফাউন্ডেশন বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশাসনের অনুমতিক্রমে এ বছরও পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে টিচার্স ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার ফরম দিয়ে ১৫০ টাকা করে আদায় করেছি।’
তবে পুষ্টকামুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মানিক স্যান্যাল বলেন, ‘বৃত্তি পরীক্ষার নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পর আদায়কৃত টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
টিচার্স ফাউন্ডেশনের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মো. আতোয়ার রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। করোনাকালে পরীক্ষা বন্ধ ছিল। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এ বছর বৃত্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার সব খরচ শেষে অবশিষ্ট টাকা সংগঠনের ফান্ডে জমা থাকে।’
মির্জাপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, করোনাকাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি ও সমাপনীসহ সব পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষার নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজে/এমএস