উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদিনে নরমাল ডেলিভারিতে ১২ শিশুর জন্ম
দিনাজপুর জেলায় স্বাভাবিক সন্তান প্রসব (নরমাল ডেলিভারীর) দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিদিনই প্রসূতিরা স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করছেন। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে ১২ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৭টি মেয়ে ও ৫টি ছেলে সন্তান।
২০১৭ সালে দিনাজপুরে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদিনে এতজন স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের ঘটনা এটাই প্রথম।
এর আগে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদিনে সর্বচ্চো ৯ জন প্রসূতি স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ নার্সদের আন্তরিকতা ও দক্ষতার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
সিজারের নামে বাণিজ্য, দালালচক্র ও অদক্ষ ধাত্রীর হাত থেকে প্রসূতিদের রক্ষায় এবং নিরাপদে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করাতেই তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীরের নেতৃত্বে বীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব কাজ শুরু করেন ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণসহ প্রচারে বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগান তারা। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০১৮ সালে দেশ সেরা হাসাপাতালের পুরস্কার পায় এই হাসাপাতালটি। এরপর জেলার সব হাসাপাতালে শুরু হয় এই কার্যক্রম। তারই ধারাবাহিকতায় যে কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে ভালো করছে তার মধ্যে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অন্যতম। বুধবার সেই খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদিনে ১২টি শিশু নরমাল ডেলিভারি করা হয়েছে।
খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৯৫ নরমাল ডেলিভারি করোনা হয়েছে। ২০২১ সালে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ১ হাজার ৩৮০টি। হাসপাতালে এসে নরমাল ডেলিভারি করানোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
অন্যদিকে প্রসব পূর্ববর্তী এএনসি সেবা নিয়েছেন ৪ হাজার ৩১১ জন এবং প্রসব পরবর্তী পিএনসি সেবা নিয়েছেন ১৫১১ জন। যার ফলে গত ৩ বছর ধরে স্বাস্থ্য সেবায় বিভাগের ২য় ও ৩য় ও জেলার প্রথম হয়েছে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এছাড়াও ব্রেস্টফিডিং কর্নার, ওআরটি কর্নার, অটিজম কর্নার, এএনসি ও পিএনসি এবং কেএমসি কর্নার চালুর মাধ্যমে হাসপাতালটিকে শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবের উদ্যোগ সফলতা লাভ করায় এটি রংপুর বিভাগে মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারি হওয়া ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নুরনাহার, নেউলা গ্রামের শেফালী খাতুন, গোয়ালডিহি গ্রামের রেজিনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের নরমাল ডেলিভারির শুরুতে ভয় লাগলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠকর্মী ও চিকিৎসকদের সাহসে হাসপাতালে এসে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এতে তাদের একদিকে যেমন খরচ বেঁচেছে অন্যদিকে প্রসবকারী মা সুস্থ আছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল জানান, মাতৃ মৃত্যুর হার কমাতে এবং নরমাল ডেলিভারি নিরাপদ করতে এই হাসপাতালে দক্ষ মিডওয়াইফরা আছে। যার ফলে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ছে এবং দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না, পাশাপাশি কোনো প্রকার অর্থও ব্যয় হয় না। পুরো উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের সরাসরি ও মোবাইল ফোনে খোঁজ-খবর নেওয়া হয় এবং প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী চিকিৎসা ও পরমার্শ প্রদান করা হয়। যার ফলে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি আরো জানান, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পর সমাজ সেবা অধিদফতরের সহযোগিতায় জন্ম নেওয়া শিশুর জন্য জামা-কাপড়, মশারি ও ওই শিশুর মাকে উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকলের সহযোগিতা পেলে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
এমদাদুল হক মিলন/এফএ/এএসএম