তিরস্কার ও বেত্রাঘাত

বিষ খেয়ে শিক্ষিকার নামে থানায় অভিযোগ, হাসপাতালে মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নরসিংদী
প্রকাশিত: ১০:১২ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২

নরসিংদীর শিবপুরে স্কুলের ড্রেসকোড না মানায় তিরস্কার ও বেত্রাঘাতের ঘটনায় অভিমানে বিষ খেয়ে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। তবে মৃত্যুর আগে ওই ছাত্রী এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়। আর ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষিকা গা ডাকা দিয়েছেন।

নিহত প্রভা (১৩) শিবপুরের বাঘাবো জয়মঙ্গল গ্রামের প্রবাসী ভুট্টো মিয়ার মেয়ে। সে শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

স্কুল ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবারও প্রভা স্কুলে যায়। তবে আজ সে স্কুলের নির্ধারিত পোশাকের বদলে অন্য রঙের পোশাক পরে গিয়েছিল। স্কুলের টিফিন শেষে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শারীরিক চর্চার ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষিকা নার্গিস সুলতানা কনিকা। ওই সময় ড্রেসকোড না মানায় প্রভাকে তিরস্কারসহ কয়েকটি বেত্রাঘাত করেন তিনি। এরপর ক্ষোভে ও অভিমানে স্কুল থেকে বের হয়ে ইঁদুর মারার বিষ খায় সে। পরে প্রভা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিবপুর থানায় যায়। সেখানে থানায় কর্মরত ডিউটি অফিসারের কাছে স্কুলশিক্ষিকা নার্গিস সুলতানা কনিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় সে।

jagonews24

প্রভা অভিযোগে উল্লেখ করে, ওই শিক্ষিকা কারণে-অকারণে তাকে তিরস্কার এবং সব শিক্ষার্থীদের সামনে অপমান করেন। তাই সে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তার মৃত্যুর জন্য শিক্ষিকা দায়ী। এর পরপরই প্রভা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুলিশ দ্রুত স্কুলের প্রধান শিক্ষককে খবর দিয়ে ওই ছাত্রীকে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর উদ্দিন মো. আলমঙ্গীর বলেন, ড্রেসকোড না মানায় ওই স্কুলছাত্রীকে শাসন করা হয়েছিল। এতে সে অপমানিত বোধ করে এ পথ বেছে নিয়েছে। আমরা জানার পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, বিকেলে এক শিক্ষার্থী থানায় আসে। এসে স্কুলের শিক্ষিকা কনিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। অভিযোগে সে উল্লেখ করেছে, প্রভার মৃত্যুর জন্য শিক্ষিকা কনিকা দায়ী। ওই শিক্ষিকা তাকে প্রায়ই ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান-অপদস্থ করেন। তাই সে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এই কথা বলতে বলতেই স্কুলছাত্রী ঢলে পড়ে যায়। পরে থাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ওসি আরও বলেন, অভিযোগ আমলে নিয়ে ওই শিক্ষিকাকে আটকে অভিযান শুরু করেছি।

এ বিষয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শামিমা নাসরিন জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলছাত্রীকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তার মা ও স্কুলের শিক্ষকরা সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় আমাদের এখানে নিয়ে আসে। তার পরনের কাপড় ভেজা অবস্থায় ছিল। আমরা তার ইসিজি করিয়েছি। একজন মৃত মানুষের রিপোর্ট যেমন আসে, তারটাও তেমনই এসেছে। মূলত সে রেট কিলার ওষুধ খেয়ে মারা গেছে। ময়নাতদন্তে বিস্তারিত বের হয়ে আসবে।

সঞ্জিত সাহা/এমআরআর/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।