পেটের দায়ে দিনমজুরের কাজে চা-শ্রমিকরা
এখন চা পাতা তোলার ভরা মৌসুম। কিন্তু দাবি আদায়ে অনড় চা-শ্রমিকরা। আন্দোলনের টানা ১৮ দিন পার হলেও ৩০০ টাকা মজুরি বিষয়টির কোনো সমাধান হয়নি। আন্দোলনের কারণে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা-বাগানের কাজ বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরা। শেষ হয়ে গেছে ঘরের চাল, ডাল, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ। দোকানিরা আর বাকিতে মালামাল দিচ্ছেন না।
প্রয়োজনের তাগিদে চা-শ্রমিকদের দিনমজুরি ও ভিন্ন কাজে যেতে দেখা গেছে। নারী চা-শ্রমিকরা এখন ধান কাটতে ক্ষেতের মাঠে নেমেছেন। দিনমজুর হিসেবে মাটি ভরাটের কাজে নেমেছেন কেউ কেউ।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ইটা, উদনা ও করিমপুর চা-বাগান ঘুরতে গেলে কথা হয় বাসন্তি, গীতা, নাছিমা, নছিবুন, মজিদুন ও টুসু মনির সঙ্গে। তারা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ সড়ক অবরোধ, মিছিল নেই। বাগানে শুধু মিটিং আছে। তাই এই সুযোগে আমরা কাজে নেমেছি।’
রোদে পোড়া ও ঘামে জবুথবু শরীর নিয়ে মাঠে ধান কাটছিলেন ইটা চা-বাগানের শ্রমিক টুসু মনি। অনেকটা প্রতিবাদী কণ্ঠে তিনি জাগো নিউজেকে বলেন, ‘চা-বাগানে কাজ বন্ধের ১৮ দিন পার হলো। আমাদের দাবি কেউ শোনে না। ৩০০ টাকা মজুরির জন্য রোদে পুড়ে আন্দোলন করছি। এতদিন কাজ বন্ধ থাকায় সংসারের চাকা আর ঘুরছে না। ঘরে খাওন নেই। আজ বিকেলে বাগানে মিটিং হবে। এই সুযোগে পেটের দায়ে ধান কাটছি। ধান মাড়াই করে রোদে শুকিয়ে খাওনের জোগাড় করবো।’
একই বাগানের ৬ নম্বর লাইনের বাসিন্দা বাসন্তি ধানের বোঝা মাথায় নিয়ে বলেন, ‘ধান কেটে বাসায় যাচ্ছি। মজুরির জন্য আন্দোলন করছি। পরিবারের আহার জোগাতে কাস্তে নিয়ে ক্ষেতে নামতে হয়েছে।’
গয়াসপুর গ্রামে তপ্ত রোদে পোড়া শরীর নিয়ে মাটি ভরাটের কাজে যাচ্ছিলেন জেলার করিমপুর চা-বাগানের রমনী ভুঁইয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কী আর করবো! ৩০০ টাকা মজুুরির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনে না। বাগান বন্ধ থাকলেও খাবার-দাবারতো বন্ধ নেই। ছয়জনের পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। কষ্ট হলেও ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পাবো এমন আশা নিয়ে কাজে যাচ্ছি।’
তার সঙ্গে মাটি ভরাটের কাজে যাচ্ছিলেন একই বাগানের লোকেছ মির্জা, সুগন্ধি মির্জা, লছমি নাইডু ও বুধনি ভুইয়া।
রাজনগর চা-বাগানের বাতাসি নাইডু জাগো নিউজকে বলেন, ‘৯ সদস্যের পরিবার সকালে চিড়া ভাজি খেয়েছি। দুপুরে ভাত। রাতের খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এভাবে এক সপ্তাহ চলছে।’
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে গত ১০ আগস্ট থেকে চারদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চা-শ্রমিকরা। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হলেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে তারা আঞ্চলিক ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ট্রেন আটকে দেন।
দাবি আদায়ে চা-শ্রমিকরা এখনো অনড় রয়েছেন। মিছিল-মিটিং অব্যাহত রয়েছে।
আব্দুল আজিজ/এসআর