বাঁশ-লাকড়ি বিক্রি করে চলছেন চা-শ্রমিকরা
টানা ১৭ দিনে গড়ালো চা-শ্রমিকদের আন্দোলন। এখনো পর্যন্ত দাবিতে অনড় হবিগঞ্জের বাগানগুলোর চা-শ্রমিকরা। আন্দোলনে কাজ বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন তারা। এরই মধ্যে জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে হয়েছে অনেককে। তারা বাগান থেকে বাঁশ এবং লাকড়ি কেটে বিক্রি করে পরিবার চালাচ্ছেন।
অনেকে আবার দুপুরের পর আন্দোলন শেষে বাগানের বাইরে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন। এ অবস্থায়ও তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দাড়াগাঁও চা-বাগানের শ্রমিক আব্দুল হামিদ বলেন, সপ্তাহ শেষেই সমিতির কিস্তি দিতে হয়। এ টাকা কোথায় পাবো? কেউ লাকড়ি তোলে, কেউ বাগান থেকে বাঁশ কাটে। এসব বিক্রি করেই সংসার চলছে।
দ্বিপুরুদ্র পাল নামে আরেক চা-শ্রমিক বলেন, বাগানে খাবার দেওয়ারও কেউ নেই। এত মানুষকে খাবার কে দেবে? তাই আমরা কষ্ট করে চলি। কেউ খেয়ে, আবার কেউ না খেয়ে চলছে।
জয়ন্তি সিনছত্রি বলেন, এখন বাইরে কাজ করে চলতে হয়। কোনোদিন পাওয়া যায় আবার কোনোদিন কাজ পাওয়া যায় না। তবে মোটামুটি ভালোই চলছি।
বৃহস্পতিবার দাড়াগাঁও, হাতিমারা, কামাইছড়াসহ চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলার বেশ কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা বাগানের নির্দিষ্ট মাঠে জড়ো হয়ে আন্দোলন করেন। দুপুর ১টার দিকে তারা আন্দোলন শেষ করে ছড়িয়ে যান।
কেউ যান বাগানের ভেতর, আবার কেউ বাইরে। বাগানের ভেতর থেকে বাঁশ, লাকড়ি কেটে নিয়ে আসেন। সেগুলো বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। বাঁশের ১২টি খণ্ড একত্রে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। লাকড়িরও আঁটি ভেদে দাম হয়। কোনোটি ১০০ আবার কোনোটি ৩০০ টাকায়ও বিক্রি হয়।
বাগানের বাইরে যারা কাজ করেন তারা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করতে পারেন। এতে তাদের সংসার চলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে একবার ওই বাগানে এক ব্যক্তির উদ্যোগে তাদের দুই কেজি চাল, দুই কেজি আটা, এক কেজি চিঁড়া দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে চারদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকরা। এরপর তারা ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হলেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত শনিবারের বৈঠকে তাদের মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হলে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। পরবর্তীকালে শ্রমিকরা এ মজুরি না মেনে ফের আন্দোলনে নামেন। কয়েক দফা বৈঠকের পর শেষ পর্যন্ত সোমবার তাদের একাংশ কাজে যোগ দিলেও মঙ্গলবার ফের তারা আন্দোলন শুরু করেন।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এমআরআর/এএসএম