সিজারের পর ‘এ’র পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ, প্রসূতির মৃত্যু

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
প্রকাশিত: ১১:৪৩ এএম, ২৩ আগস্ট ২০২২

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় শিরিন বেগম (৩২) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রক্তশূণ্য ওই প্রসূতির ‘এ’ পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন থাকলেও তাকে পুশ করা হয় ‘বি’ পজিটিভ রক্ত। ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের মালিক ও চিকিৎসক গা ঢাকা দিয়েছেন। বন্ধ রয়েছে তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনও।

রোববার (২১ আগস্ট) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি সোমবার (২২ আগস্ট) জানাজানি হয়। শিরিন বেগম উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী।

সরেজমিনে জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। খোলা রয়েছে মাত্র একটি ওষুধের ফার্মেসি। তবে এ ঘটনায় ওই ওষুধ ফার্মেসির কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। পরে জনসেবা হাসপাতালের ব্যবস্থাপক জহির উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে রোববার (২১ আগস্ট) রাতে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে ওই রোগী মারা গেছে কিনা তার জানা নেই।

নিহতের ননদ হোসনে আরা বলেন, রোববার সকালে আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী হঠাৎ ব্যথা অনুভব করেন। এ সময় একই এলাকার বাসিন্দা জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক বন্যা বেগমের কাছে যাই পরামর্শের জন্য। বন্যা তার হাসপাতাল থেকে দুজন নার্স পাঠান রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরে সেখানে রোগী নিয়ে গেলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিজার করেন ওই হাসপাতালের ডাক্তার মাসুদ। এ সময় প্রসূতি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।

কিন্তু দীর্ঘ সময় নিয়ে অপারশেন করার পর ডাক্তার জানান রোগীর জরায়ু ফেটে গেছে। প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে, বি পজিটিভ রক্ত লাগবে। তাদের কথামতো বি পজিটিভ রক্ত জোগাড় করে রোগীকে দুই ব্যাগ রক্ত পুশ করা হয়। কিন্তু তাতেও রোগী সুস্থ হচ্ছিল না। শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে আসছিল। পরে যখন পুনরায় রোগীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়, তখন জানা যায় রোগীর রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ।

এরমধ্যে আমাদেরকে এ পজিটিভ রক্ত জোগাড় করতে বলেন। এখন আবার এ পজিটিভ রক্ত কেন, প্রশ্ন করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে কোনো সমস্যা নেই। পরে আমরা তড়িঘড়ি করে এ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করি। কিন্তু এ পজিটিভ রক্ত পুশ করার কিছুক্ষণ পরই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখে রাত ৮টার দিকে রোগীর অবস্থা খারাপ বলে তাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেয়।

সিজারের পর ‘এ’র পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ, প্রসূতির মৃত্যু

পরে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় রওনা দিই। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই ব্যাগ এ পজিটিভ রক্তের ব্যাগ রোগীর সঙ্গে দিয়ে দেয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে রোগীর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান রোগীকে মৃত অবস্থায় এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনসেবা হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, এর আগেও এই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় একাধীক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এখানে সার্বক্ষণিক কোনো চিকিৎসক থাকেন না। প্রয়োজন হলে ফোনে ডেকে এনে সিজার করানো হয়।

তিনি আরো বলেন, জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক বন্যা বেগম এক সময় এই হাসতাপালের মূল মালিক ডা. আসাদুজ্জামান আসাদের রোগী দেখার সিরিয়াল দিতেন। এখন তিনি জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএম মনজুর-এ-এলাহী জানান, জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র আপডেট নেই। তাদের পুরনো সব কাগজপত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তারপরও তারা কিভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়?

আব্দুর রহমান আরমান/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।