চাঁদপুরে এক মাসেই বন্ধ ৩০ শতাংশ পোলট্রি খামার

নজরুল ইসলাম আতিক
নজরুল ইসলাম আতিক নজরুল ইসলাম আতিক , জেলা প্রতিনিধি, চাঁদপুর
প্রকাশিত: ০৫:২১ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২২

 

খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের প্রভাবে বিপাকে পড়েছেন চাঁদপুরের পোলট্রি খামারিরা। গত এক মাসে বন্ধ হয়েছে জেলার ৩০ শতাংশ পোলট্রি খামার। যারা এখনো টিকে আছেন তারাও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা।

সরেজমিনে কয়েকটি পোলট্রি খামার ঘুরে দেখা যায়, খাবারের মূল্য বৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকেই খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। যাদের তিনটি খামার ছিল তাদের অনেকেই দুটি বদ্ধ রেখে মাত্র একটির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

jagonews24

চাঁদপুর শহরের পূর্ব গুণরাজদীর পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. হারুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমার দুটি খামার ছিল, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ে বর্তমানে একটি খামার বন্ধ হয়ে আছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ব্রয়লারের খাবারের মানও ভালো না। ব্যবসার এমন পরিস্থিতি, ডিলারের কাছে কয়েক লাখ টাকার ঋণ হয়েছে। বর্তমানে আমাদের পথে বসার অবস্থা। কী করবো জানি না। অন্য কোনো ব্যবসা করিনি তাই এই ব্যবসাও ছাড়তে পারছি না। আবার ব্যবসায় থেকেও ঋণগ্রস্ত হচ্ছি।

jagonews24

দক্ষিণ বিষ্ণুদির পোলট্রি খামারি শফিকুল ইসলাম বলেন, ২৫ বছর ধরে আমি পোলট্রি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্রয়লার মুরগি পালনে বিদ্যুৎ অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যুতের যে লোডশেডিং তাতে পোলট্রি ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুতের সমস্যায় মুরগি ঠিকমতো বাড়ছে না। এরপর আবার গত কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লারের খাদ্যের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেড়েছে। প্রতি বস্তায় বেড়েছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ঠিকমতো না থাকায় গরমে আমার এক হাজার মুরগির মধ্যে বড় সাইজের প্রায় দেড়শো মুরগি মারা গেছে। তার ওপর আমরা মুরগি বিক্রি করছি মাত্র ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে।

jagonews24

তবে বাজার ঘুরে ব্রয়লার মুরগির খুচরা মূল্য দেখা যায় ১৭০ টাকা কেজি। বিপনীবাগ বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ডিলারের কাছ থেকে আমরা ১৫২ টাকা করে ব্রয়লার মুরগি কিনি। তাছাড়া পরিবহন খরচ আছে, আবার দোকানে রাখলে খাবার খরচ আছে। এরপর দোকানে মুরগিগুলো রেখে আমরা রাতে বাড়িতে যাই। অনেক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় প্রতিদিনই দু-একটা করে মুরগি মারা যায়।

চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. সেকান্দার খান বলেন, আমার দুইটি পোলট্রির খামার ছিল। বিদ্যুতের সমস্যা এবং খাবারের দাম বেশি হওয়ায় কয়েক মাস ধরে আমার খামার বন্ধ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি আবার খামার চালু করতে চাই।

jagonews24

ওয়ারলেস বাজারের খুচরা মুরগি ব্যবসায়ী রেদওয়ান গাজী জানান, গত কয়েকদিন আগে দেড় ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে অতিরিক্ত গরমে স্ট্রোক করে আমার দোকানের ২৪ পিস মুরগি মারা গেছে।

নতুন বাজারের পোলট্রিসামগ্রী সরবরাহকারী নিউ সরকার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী টিটু সরকার বলেন, আমাদের পোলট্রি ব্যবসার অবস্থা ভালো না। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, লোডশেডিং ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বর্তমানে মুরগি পালনে অনেক খরচ বেড়েছে। এদিকে ভোক্তারা মনে করছে, বাজারে মুরগির দাম বেশি কিন্তু উৎপাদন খরচের তুলনায় আমরা সঠিক মূল্য পাচ্ছি না। এমন অবস্থায় পোলট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। খামারিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

jagonews24

চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে চাঁদপুরে ৯১৮টি পোলট্রির খামার রয়েছে। যার মধ্যে গত এক মাসে ৩০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আসলে বৈশ্বিক কারণে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের সমস্যা হচ্ছে। তবে ব্রয়লার খামারিদের জন্য ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের প্রয়োজন। আশা করি, অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে। তবে করোনাকালীলে সরকারের পক্ষ থেকে খামারিদের বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সমস্যাগুলোও আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। আশা করি, সরকার এই শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।