বৃষ্টির দেখা নেই, আমন চাষ নিয়ে বিপাকে মেহেরপুরের কৃষকরা
অনাবৃষ্টি আর অব্যাহত খরায় চলতি মৌসুমে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মেহেরপুরের চাষিরা। টানা তাপপ্রবাহে ক্ষেতে লাগানো ধানের চারা পুড়ে যাচ্ছে। অনেক চারা হলুদ রং ধারণ করেছে।
কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় আমনের বীজতলা পুড়ে গেছে। আমন চাষের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এখনো অনাবাদি পড়ে আছে অনেক জমি। এ অবস্থায় আমন চাষ নিয়ে তারা বিপাকে রয়েছেন।
সরেজমিন সদর উপজেলার যাদবপুর মাঠে দেখা যায়, ধানের চারা রোপণ করার জন্য জমি প্রস্তুত করছেন কৃষকরা। শ্যালো মেশিন থেকে জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে।
আমজাদ আলী নামের একজন কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘চাষাবাদ করে আর সংসার চালানো যাবে না। যেভাবে ডিজেল, রাসায়নিক সারের দাম বাড়ছে তাতে কৃষিকাজ করে লাভবান হওয়া সম্ভব হবে না।’
কৃষক আক্কাস মিয়া, শাকিরুল মিয়া ও শাহিন হোসেন বলেন, সহগলপুর বিলের জমিতে এ সময় অনেকে আমন ধানের চাষ করেন। বর্ষা ভরা মৌসুমে বিলে শাপলার দেখা মেলে। তবে এবারে বিলে এক ফোটা পানি জমেনি। মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এবারে বিলের নিচু জমিতে ধানচাষের জন্য কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন। তবে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে ধানের আবাদ করতে অনেক খরচ হচ্ছে। অতিমাত্রার খরচ করে ধানের আবাদ করে লোকশান হবে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এরশাদ আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে ধানের জমির মাটি নরম করা হচ্ছে। আগে ৮০ টাকা লিটার ডিজেল কিনে সেচ দেওয়ার কাজ চলছিল। এখন ১১৪ টাকা দিয়ে কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাসায়নিক সারের দাম হু হু করে বাড়ছে। এভাবে সরকার একের পর এক জিনিসের দাম বাড়াতে থাকলে মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে।’
মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরায় ফসল চাষে ব্যাঘাত ঘটছে। আমন চাষে প্রতিটি সেচ বাবদ ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। কৃষকরা সেচ পাম্পের মালিকের সঙ্গে মৌসুম চুক্তি করেও সেচ দিচ্ছেন। এতে এক বিঘা জমিতে ধানচাষ করতে এ বছর ৭-৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত সেচ খরচ গুনতে হবে।
এ বছর চার বিঘা জমিতে ধানচাষ করেছেন পিরোজপুর গ্রামের কৃষক আজিবার রহমান। বৃষ্টি না হওয়ায় একদিন পরপর জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এতে এবার সেচ খরচ বেশি পড়বে বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক ছামিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর ৬-৭ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করি। এ বছর অনাবৃষ্টি আর খরার কারণে ভালো চারা পাইনি। বীজতলাও রোদে শুকিয়ে গেছে। আমন চাষ নিয়ে চিন্তায় আছি।
একই উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আষাঢ় চলে গিয়ে আজ ভাদ্র মাসের ৭ তারিখ। তবু বৃষ্টির দেখা নেই। শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে গিয়ে অনেক বেশি খরচ পড়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মেহেরপুর জেলার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সামছুল আলম বলেন, চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে ২৬ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এখনো সময় আছে। চারা নিয়ে অনেকেই অপেক্ষায় আছেন। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে কৃষকরা ধান লাগাতে শুরু করবেন।
আসিফ ইকবাল/এসআর/এএসএম