এখনো বৃটিশ সরকার থেকে ভাতা পান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক মান্নান

নূর মোহাম্মদ
নূর মোহাম্মদ নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২২
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীর সৈনিক আব্দুল মান্নান

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বড় আজলদী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল মান্নান। জন্ম তারিখ ১৯২০ সালের ১৬ নভেম্বর। শত বছর পার হওয়া বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান এলাকায় পরিচিত মিলিটারি হিসেবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সম্মুখ সারিতে থেকে অংশ নেন এ বীর যোদ্ধা। এখনও ভাতা পান বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে।

বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এই তিন শাসনব্যবস্থা দেখেছেন নিজের চোখে। তিনটি দেশের নাগরিক হওয়ার গৌরব রয়েছে শতবর্ষী আব্দুল মান্নানের। দীর্ঘদিন আঁকড়ে রেখেছেন বীরত্বের স্বীকৃতি বেশ কয়েকটি মেডেল ও পোশাক।

Mannan-(1)

জানা গেছে, আব্দুল মান্নান ১৯৪২ সালে বৃটিশ-ভারতের বেসরকারি সোলজার হিসেবে অংশ নেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। পাকিস্তান-চীনের সীমান্তবর্তী হাসানাবাদ এলাকায় এক মাসের ট্রেনিং শেষে ল্যান্সনায়েক হিসেবে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধে অংশ নেন ব্যাটালিয়ন ক্যাপ্টেন ড. গলিবের নেতৃত্বে। কয়েক হাজার সৈনিকসহ ছয় মাসের খাবার মজুত করে তাদের বহনকারী যুদ্ধ জাহাজ রওনা হয় কলম্বোর পথে।

অস্ত্র, গোলা-বারুদসহ চারটা কামান বিভিন্ন দিকে তাক করা। টানা একমাস রাত-দিন আটলান্টিক মহাসাগরে জাহাজটি অংশ নেয় পানিপথের যুদ্ধে। এক মাস পর কলম্বোর কাছাকাছি পৌঁছে হিটলারের একটি জাহাজকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে হায়দরাবাদ নিয়ে আসা হয় তাদের।

Mannan-(1)

পানিপথের যুদ্ধের পর করাচি থেকে চলে যান মিয়ারমার। মিয়ানমার আসার পর হিরোশিমায় বোমা নিক্ষেপ করা হয়। আর তখনই মূলত শেষ হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

শত বছর ধরে সযত্নে আলগে রাখা বিভিন্ন ব্যাচ লাগানো সৈনিকের কড়া পোশাক গায়ে জড়িয়ে এভাবেই যুদ্ধের কাহিনী শোনান আব্দুল মান্নান।

যুদ্ধ শেষে সামান্য টাকা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয় আব্দুল মান্নানকে। কিন্তু এরপর আর খবর নিচ্ছিলো না বৃটিশ সরকার। এতে ক্ষুব্ধ হন তিনি। চিঠি লখেন বৃটেনের রানির কাছে। তার চিঠির জবাবও দেন রানি। এরশাদ সরকারের সময় বৃটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয় তার সঙ্গে। সেই থেকে সশস্ত্র বাহিনী বোর্ডের মাধ্যম তাকে নিয়মিত বিভিন্ন অনুদান দিচ্ছে বৃটিশ সরকার।

Mannan-(1)

তবে যুদ্ধের সময় পাওয়া মেডেলগুলোই তার কাছে মহামূল্যবান বলে জানালেন লেন্সনায়েক আব্দুল মান্নান। লেখাপড়া না জানলেও ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন।

আব্দুল মান্নান জানান, যুদ্ধ করে তিনি তেমন কিছু পাননি। তবে বৃটেনের রানি তার চিঠির জবাব দিয়েছেন। তার সংগ্রহে আছে বীরত্বের স্বীকৃতিসরূপ কয়েকটি মেডেল ও পোশাক। এটিই তার কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা।

যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে একটি সরকারি চিনিকলে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নেন আব্দুল মান্নান। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই চিনিকলে গোপনে অস্ত্রের ট্রেনিং দেন কর্মচারিদের।

Mannan-(1)

তবে বৃটিশ এ যোদ্ধাকে কখনই দেওয়া হয়নি রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি। পাননি দেশের হয়ে কোনো সরকারি মর্যাদা।

বর্তমানে তার দুই স্ত্রী ও ১১ ছেলে-মেয়ে রয়েছে। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেই সময় কাটান তিনি। বয়স এত বেশি হলেও এখনও খালি চোখে সবকিছু দেখতে পারেন। চলাফেরা করেন একাই। সময় পেলেই লোকজনকে শোনান যুদ্ধের কাহিনী।

তার বড় ছেলে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক। এর জন্য আমরা গর্বিত। সুযোগ পেলেই তিনি আমাদেরকে যুদ্ধের কাহিনী শুনান। তবে এ দেশে বাবা এখনো কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। আমরা কেমন আছি কেউ কোনোদিন খোঁজও নিতে আসেনি। তবে এ নিয়ে বাবার কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি ভালো আছেন।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।