আমন আবাদে সার ডিজেল ও সেচের বাগড়া
একদিকে অনাবৃষ্টি, অন্যদিকে সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি। এর মধ্যে আছে শ্রমিকের উচ্চ মজুরি। এ বছর ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত ১২০ শতাংশ জমিতে প্রায় ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হতে পারে কৃষকের। যা গত মৌসুমে সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিলো।
খরচ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে ফেনীর পরশুরামের বীরচন্দ্রনগর এলাকার কৃষক আবুল হোসেন সাজু বলেন, গত আমন মৌসুমে ১২০ শতাংশ জমি চাষে ট্রাক্টর বাবদ খরচ দিতে হয়েছে সাড়ে তিনশ টাকা। যা চলতি বছর জমিভেদে ১৫০ টাকা বেড়ে গেছে। সেচেও গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। আগের থেকে এখন শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে ১২০ শতাংশে ৫শ থেকে ৭শ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। এছাড়া আরও যোগ হচ্ছে সার এবং শ্রমিকের মজুরি।
এবাদুল করিম নামে আরেক কৃষক বলেন, মৌসুমের শুরুতে রোপনের সময় এবং মধ্যবর্তী সময়ে আগে বেশকিছু সার প্রয়োগ করতাম। যা এ বছর ঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক বস্তা ইউরিয়া ও টিএসপি সারের জন্য আগের চেয়ে বস্তা প্রতি এখন সাড়ে ৮শ টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে। কয়দিন পরে জমিতে আগাছা বাছাইয়ের জন্য আবার ৬শ থেকে ৮শ টাকা দরের শ্রমিকের মজুরি দিতে হবে। এতো খরচের পর মৌসুম শেষে রোগবালাই থেকে টিকে উঠে ঠিকভাবে ফসল ঘরে তোলা নিয়েও শঙ্কা আছে।
ধান ও চালের দামের সমন্বয় নেই অভিযোগ করে সোনাগাজীর সোনাপুর এলাকার কৃষক আবুল মিয়া বলেন, দেশে চালের দাম যেভাবে কয়দিন পরপর বাড়ে সে তুলনায় ধানের দাম বাড়ে না। এখন দৈনিক ২ জন শ্রমিকের মজুরি দেড় মণ ধানের বাজারদরের চেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনরা যদি বিষয়টি এখনই গুরুত্ব না দেয় তাহলে প্রান্তিক কৃষকদের আবাদ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উপজেলায় ২১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকের খরচ বাড়ায় কিছুটা সমস্যা হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন প্রভাব পড়বে না।
কৃষকের বাড়তি খরচ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, ডিজেল, ইউরিয়া সার ও কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ৫০ ভাগের বেশি জমিতে আবাদ শেষ হয়েছে বলেন তিনি। সংকট মোকাবিলা করে নির্ধারিত সময়েই আবাদ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কৃষিবিদ।
সেচেও বাড়তি খরচ
পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে সেচ নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষক। সম্প্রতি দেশে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচ নিয়ে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার শ্যালো চালকদের দেওয়া তথ্যমতে, মূল্য বৃদ্ধিতে এক ঘণ্টায় শ্যালোমেশিন চালনায় এখন ১০৫ টাকার বেশি বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পরশুরামের শহীদুল ইসলাম চৌধুরী নামে এক শ্যালো মালিক জানান, আগে ১২০ শতাংশ জমি সেচ দিতে ১০৫ টাকার ডিজেল খরচ হতো। যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এ মৌসুমের দেড়মাস ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন কৃষক আবার নতুনভাবে বাড়তি দাম দিতেও অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।
আবুল কালাম নামে আরেক চাষি বলেন, চলতি মৌসুমে নিজ মালিকানাধীন জমির জন্য প্রায় ৮ হাজার টাকার বেশি শুধু সেচের জন্য খরচ হচ্ছে। নিজের জমি তাই অনাবাদীও রাখতে পারছি না। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে।
এফএ/জিকেএস