দস্যুর কবলে বন বিভাগের প্রায় ১০০ একর জমি
বান্দরবান রোয়াংছড়ির তারাছা ইউনিয়নে সাইঙ্গ্যা এলাকায় বন বিভাগের প্রায় ১শ একর জায়গা দখলে নিয়েছে কতিপয় ভূমিদস্যু। ইতোমধ্যে বন বিভাগের প্রায় কয়েক কোটি টাকার গাছ কেটে পাচার করেছে তারা। এরপর সেসব খালি জায়গায় নানা প্রজাতির ফলদ গাছ লাগিয়ে জায়গাগুলো দখলে নিচ্ছে এসব ভূমিদস্যু।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৮১-৮২ সালে বান্দরবান বন বিভাগ তাদের প্রায় ১০০ একরের এ জায়গাটিতে সেগুনসহ মূল্যবান প্রজাতির বৃক্ষ রোপন করে। প্রায় ৪০ বছরের মধ্যে গাছগুলো অনেক বড় হয়ে ওঠে। এরইমধ্যে বন বিভাগের অনেক কর্মকর্তা বদলি হয়ে গেলে জায়গাটির ওপর বন বিভাগের নজরদারি কমতে থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, এই সুযোগে ফোরকান, মুন্সিমিয়াসহ বেশ কয়েকজন ভূমিদস্যু বন বিভাগের গাছগুলো রাতের আঁধারে কেটে পাচার করেন। পরে এ খালি জায়গাগুলো নিজেদের দাবি করে দখলে নেন। বর্তমানে তারা সেখানে ফলের বাগান করে উৎপাদিত ফল বিক্রি করছেন।
বনবিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জায়গাটি বন বিভাগের উল্লেখ করে বলেন, বিভিন্ন সময় কর্মকর্তাদের বদলিজনিত কারণে নতুন আসা কর্মকর্তারা তাদের জায়গা চিনতে পারেন না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় গাছচোর ও ভূমিদস্যুরা গাছগুলো কেটে জায়গাগুলো দখলে নিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এক সময় বন বিভাগের লাগানো সেগুন গাছসহ বিভিন্ন গাছের বাগানের পুরো জায়গাই খালি। তার পরিবর্তে সেখানে লাগানো হয়েছে কলা, পেঁপে, পেয়ারাসহ নানা ফলের গাছ। আবার কোথাও কোথাও নতুন করে গাছ লাগানোর জন্য পরিষ্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. ফোরকান বলেন, এ জায়গাটি আমি প্রয়াত রাজার সহধর্মীনির (রানী) কাছ থেকে কিনেছি। তবে বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে তারাছা ইউনিয়নের ছাইঙ্গ্যার মেম্বার মো. মোরশেদ জানান, ১৯৮১/৮২ সালে বন বিভাগ তাদের ১শ একর জায়গায় সেগুনসহ মূল্যবান প্রজাতির গাছ লাগায়। গাছগুলো বর্তমানে কয়েকজন ভূমিদস্যু কেটে পাচার করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে বনবিভাগের জায়গাও দখল করে ফেলেছে। বন বিভাগ এগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেখাশুনার দায়িত্ব দিলে এ সমস্যা হতো না।
বান্দরবান বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. এমদাদ জানান, শিগগিরই আমরা আমাদের জায়গায় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেব ও অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা নতুন করে গাছের চারা রোপণ করে জায়গাগুলো ভূমিদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করবো। এসব ভূমি দখলে ও গাছ পাচারে কারো সম্পৃক্ততা পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পাল্পউড ডিভিশন) মাহমুদুল হাসান বলেন, অবশ্যই বন বিভাগের জায়গাটি দখলমুক্ত করা হবে এবং যারা গাছ পাচার ও ভূমি দখলে নিয়েছে তাদের তদন্ত সাপেক্ষে খুঁজে বের করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নয়ন চক্রবর্তী/এফএ/এমএস