পল্লিচিকিৎসক হত্যায় একজনের যাবজ্জীবন
যশোর কেশবপুরের চাঞ্চল্যকর পল্লিচিকিৎসক সুব্রত কুণ্ডু হত্যা মামলার রায়ে এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আরেকজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেছেন।আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রিস আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আকবর আলী কেশবপুর উপজেলার দত্তনগর গ্রামের মৃত রফিউদ্দিনের ছেলে। আর খালাসপ্রাপ্ত সবুরা খাতুন খুকু মনি একই উপজেলার ভাল্লুকঘর গ্রামের ইউনুস আলী খার স্ত্রী। নিহত সুব্রত কুণ্ডু শ্রীরামপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র কুণ্ডুর ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সুব্রত কুমার কুণ্ডু মির্জানগর বউ বাজারে একটি চেম্বার নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে চেম্বার বন্ধ করে বাড়ির উদ্দেশে বাইসাইকেলে ফিরছিলেন তিনি। মির্জানগর গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুস সাত্তার খানের বাড়ির সামনে পৌঁছামাত্র অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা সুব্রতকে গুলি করে। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
করে পুলিশ মরদেহ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এই ঘটনায় নিহতের বাবা কার্তিক চন্দ্র কুণ্ডু কেশবপুর থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে এসআই জাহাঙ্গীর আলম আসামি আকবর আলী ও সবুরা খাতুনসহ একই এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
ওই চার্জশিটের ওপর আদালতে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী। আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য সিআইডি যশোর জোনকে নির্দেশ দেন। সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ মোস্তফা কামাল তদন্ত শেষে ওই তিনজনের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন। কিন্তু সেই তদন্তে জানা যায় দণ্ডপ্রাপ্ত আকবর আলী ও ইউনুস আলী খা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় পালিয়ে বেড়াতেন।
এদিকে সুব্রত কুণ্ডু ডাক্তারি চেম্বারের পাশাপাশি ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করতেন। ওই রাতে আকবার ও ইউনুস আলী ছিনতাই করার উদ্দেশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে ছিলেন। সুব্রত রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে তারা তাড়া করেন। সুব্রত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ইউনুস গুলি করেন। আসামিদের পালাতে সহায়তা করেন ইউনুসের স্ত্রী খুকুমনি।
এদিকে, তদন্ত চলাকালে ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ যশোর-মাগুরা মহাসড়কে ডাকাতিকালে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রধান অভিযুক্ত ইউনুস আলী খাঁ নিহত হন। পরে তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ মোস্তফা কামাল আসামি ইউনুস আলীর মৃত্যুর কারণে তাকে মামলার দায় থেকে আদালতে অব্যাহতির আবেদন করেন। একইসঙ্গে আকবর আলী ও সবুরা বেগমের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার আসামি আকবর আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে অপর আসামি সবুরা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো প্রমাণ না পেয়ে খালাস দেন বিচারক। রায় ঘোষণাকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আকবর আলী পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মিলন রহমান/এমআরআর/জেআইএম