জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: লাগামহীন নির্মাণসামগ্রীর দাম

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৬:৪৯ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২২

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে জামালপুরে রড, সিমেন্ট, রং, টাইলস এবং ঢেউটিনসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। সপ্তাহের ব্যবধানে রড প্রকারভেদে টনপ্রতি চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে নির্মাণসামগ্রীর সব পণ্যের দাম বেড়েছে।

রড
জেলায় রডের দাম টনপ্রতি চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে। একেএস ৮৮ হাজার থেকে বেড়ে ৯২ হাজার, বিএসআরএম ৮৯ হাজার থেকে বেড়ে ৯৩ হাজার, পিএইচপি ৮৫ হাজার থেকে বেড়ে ৯০ হাজার, এসএসআরএম ৮০ হাজার থেকে বেড়ে ৯০ হাজার টাকা টন বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এএসবিআরএম ৮১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৮৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

jagonews24

সিমেন্ট
সিমেন্ট নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম একটি পণ্য। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে সিমেন্টের ওপরেও। বাজার ঘুরে দেখা যায়, মেট্রোসিম ৫০০-৫১০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫০-৫৬০ টাকা, আকিজ ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৬০, মীর সিমেন্ট ৪৭০ থেকে বেড়ে ৫৪০, হোলসিম ৫৩০ থেকে বেড়ে ৫৯০, সেভেন রিংস ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টাইলস
বাজারে সব ধরনের টাইলসের দাম বেড়েছে। ট্রান্সপোর্ট খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি স্কয়ার ফিটের টাইলসের মূল্য এক থেকে দুই টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৮-১২ সাইজের প্রতি স্কয়ার ফিটের ওয়াল টাইলসের আগে দাম ছিল ৩৪ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকায়। ১২-১২ সাইজের ফ্লোর টাইলসের আগে দাম ছিল ৫০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়।

রং
রং একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণসামগ্রী। এটি একদিকে যেমন ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি ঘরের স্থায়িত্বও বাড়িয়ে দেয়। তাই দিনদিন রঙের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বাজারে সব ধরনের রঙের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৮ লিটারের এক ড্রাম প্লাস্টিক রং আগে বিক্রি হতো ৪ হাজার ৪০০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৩০০ টাকায়। ওয়েদার কোট রং বিল্ডিংয়ের বাইরে ব্যবহার করা হয়। এ রং আগে বিক্রি হতো ৫ হাজার ৬০০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ২০০ টাকায়। এনামেল পেইন্ট আগে বিক্রি হতো ৩৪০ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকায়।

ঢেউটিন
বাজারে বেড়েছে সব ধরনের ঢেউটিনের দামও। ঢেউটিন প্রতি বান্ডিলে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে মাঝারি ধরনের গরু মার্কা ঢেউটিন বিক্রি হতো ৪ হাজার ৪০০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪৫০ টাকায়। পিএইচপি এরাবিয়ান হর্স মার্কা ঢেউটিন ৪ হাজার ৬০০ থেকে বেড়ে ৪ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও চিকন, পাতলা সব ধরনের ঢেউটিনের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

শাহ ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী রঞ্জন কুমার শাহ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিটি পণ্যই এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের দামে আর মালামাল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখন আমাদের বেশি দামে মালামাল কিনতে হচ্ছে আর বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

jagonews24

মাহিদ মালেক এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী শিবু কর্মকার জানান, সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। বাজারে সব ধরনের রঙের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাহমুদ ট্রেডার্সের মাহমুদ আল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, কোনো কোম্পানি আগের মতো মালামাল দিচ্ছে না। তারা বলছে- ফ্যাক্টরিতে মালামাল মজুত নেই। সামনে পণ্যের মূল্য আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনিও।

নূরুল আমীন নামে এক ক্রেতা জানান, বাজারে সব পণ্যের দামই আকাশচুম্বী। দিনদিন সংসার চালানো খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। বাজারে রড, সিমেন্ট, ঢেউটিন, রং, ইট, কাঠ, বাঁশ সবকিছুর দামই বেশি। তাই তাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের দিকে তাকিয়ে অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেন হাতের নাগালে থাকে সেদিকে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে জামালপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রড সিমেন্টের মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দেয় না। কিন্তু তিনি মনে করেন এ বিষয়ে একটি শক্ত সিদ্ধান্ত সরকারের নেওয়া উচিত। রড সিমেন্টের বিষয়টি আগামীকাল (শনিবার) থেকে শক্তহাতে মনিটরিং করবেন বলেও জানান তিনি।

মো. নাসিম উদ্দিন/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।