বানিয়াচংয়ে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য: স্কুল থেকে ৩ ছাত্র বহিষ্কার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০২২

দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়েও গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। কতিপয় পাতিনেতা নিজেদের শোডাউনের জন্য এসব শিশু-কিশোরদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছেন। আর এতে করে উঠতি বয়সী এসব শিশু কিশোর গ্রুপ বা গ্যাং কালচারে আসক্ত হয়ে পড়ছে। হয়ে উঠছে বেপরোয়া।

৬ আগস্ট বানিয়াচংয়ে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যের ঘটনায় মেধাবিকাশ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩ ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (৭ আগস্ট) বহিষ্কৃত ৩ ছাত্র এবং বহিরাগত আরও ৬ জনসহ মোট ৯ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভানু চন্দ্র চন্দ।

অভিযুক্তরা হলো- বানিয়াচং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে নয়ন মিয়া ও আবু হুরায়রা, শাহীন মিয়ার ছেলে টুটুল মিয়া, মনির মিয়া ওরফে কনা মিয়ার ছেলে সালমান মিয়া, আবু মিয়ার ছেলে তায়েফ মিয়া, দাসপাড়া গ্রামের শাহাব উদ্দিনের ছেলে রবিন মিয়া, দত্তপাড়া গ্রামের মোশাররফ মিয়ার ছেলে মারুফ মিয়া, পুরান তোপখানা গ্রামের ইউসুফ মিয়ার ছেলে ইয়াকুব মিয়া এবং এনামুল মিয়ার ছেলে মবিন মিয়া। এদের মধ্যে সালমান ও তায়েফ মেধাবিকাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এবং রবিন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তাদের ৩ জনকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভানু চন্দ্র চন্দ জানান, ৬ আগস্ট নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র সালমান বিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে ছাত্রদের বিরক্ত করে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শহীদুল ইসলাম লামিম এর প্রতিবাদ করলে সালমান ছুটির পর দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে স্কুল থেকে চলে যায়। বিদ্যালয় ছুটির পর ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি ফেরার সময় উপজেলা পরিষদের গেট সংলগ্ন বাবুল মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে সালমান, তায়েফ ও রবিন বহিরাগত একদল ছেলেকে নিয়ে লামিমের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করতে থাকে।

এ সময় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করলে তাদেরকেও কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক এগিয়ে গেলে তাদের সঙ্গেও হামলাকারীরা অসদাচরণ করে। শিক্ষকরা ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে দু’পক্ষকে দুদিকে ফিরিয়ে দিয়ে চলে যান।

এর কিছুক্ষণ পর বানিয়াচং শহীদ মিনারের সামনে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আমির উদ্দিন শিমুলকে পেয়ে তার উপর হামলা চালায় পূর্বের হামলাকারীরা। শিমুল বলতে থাকে তোমরা আমাকে মারছো কেন? আমি কী দোষ করেছি? হামলাকারীরা মারধর অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বলতে থাকে তুই উপজেলার সামনে ফিরাইছিলি কেন? তখন বানিয়াচং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার উজ্জ্বল মিয়াসহ উপস্থিত লোকজন শিমুলকে হামলাকারীদের কবল থেকে রক্ষা না করলে তাকে হয়তো প্রাণে মেরেই ফেলতো।

এ ঘটনার একদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের অভিভাবকরা ঘটনা মীমাংসার জন্য কোনো যোগাযোগ করেনি। হামলার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা ম্যানেজিং কমিটিকে ঘটনা অবগত করলে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ অভিযুক্ত ছাত্রকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তারাসহ বহিরাগত ৬ জন ও অজ্ঞাতনা আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে তিনি জানান। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য এএসআই সাদ্দাম হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধান শিক্ষক।

বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব জানান, মেধাবিকাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি অভিযোগ দিয়েছেন তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য এএসআই সাদ্দাম হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।