সিলেটে ইন্টার্ন চিকিৎসককে উত্ত্যক্তের মামলায় যুবকের আত্মসমর্পণ
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে উত্ত্যক্ত মামলার প্রধান আসামি ও কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় করা মামলার ২ নম্বর আসামি এ এইচ আব্দুল্লাহ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের দুপুরে জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আত্মসমর্পণ করা আব্দুল্লাহ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিকের ভাতিজা।
এর আগে হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে উত্ত্যক্ত ও দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় ওই আওয়ামী লীগ নেতার আরেক ভাতিজা এহসানসহ তিন আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে মামলার আরও চার আসামি এখনো পলাতক রয়েছে।
গত ৩০ জুলাই হাসপাতালের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনকালে রাত ৯টায় নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে উত্যক্ত করেন আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। এর একদিন পর ওসমানী মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসের ভেতর ঢুকে দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করেন আব্দুল্লাহ ও দিব্য সরকারের নেতৃত্বে একদল যুবক। পৃথক দুটি ঘটনার প্রতিবাদে ১ আগস্ট (সোমবার) রাত ১০টা থেকে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন হাসপাতালের কয়েকশো ইন্টার্ন চিকিৎসক।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িত দুইজনকে আটক পুলিশ করে। এর পরদিন মঙ্গলবার ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল ও কলেজ প্রশাসন দুটি মামলা করে। মামলায় এজাহারনামীয় সাতজনকে আসামি করে অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে অভিযুক্ত রাখা হয়।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হানিফ এবং মেডিকেল কলেজের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহমুদুল রশিদ বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। এর মধ্যে ইন্টার্ন চিকিৎসককে উত্যক্তের মামলায় আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া আরও তিন-চার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
আর ছাত্রদের ওপর হামলা মামলার আসামিরা হলেন- দিব্য, আব্দুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি। আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে সাঈদ হাসান রাব্বি ও এহসান আহমদকে গত ১ আগস্ট সোমবার রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে গত মঙ্গলবার তাদের এসব দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরদিন দুপুরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সমঝোতা না হওয়ায় ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় এ ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও শুরু করেন তারা।
পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ প্রশাসন, কলেজ ও হাসপাতাল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসে তাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিলেও অপর আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুর দেড়টা থেকে ফের আন্দোলনে নেমে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেসময় শুধু জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগে সেবা অব্যাহত রাখা হয় বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
পরে বুধবার মধ্যরাতে শাহপরান এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি দিব্য সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, বুধবার দুপুরে মামলার আসামিদের গ্রেফতারে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বহির্বিভাগসহ হাসপাতালের সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেন তারা। পরে বুধবার বিকেলে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এক সপ্তাহের মধ্যে মামলার সব আসামিদের গ্রেফতারের আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করা হয়।
ছামির মাহমুদ/এমআরআর/এমএস