তিনতলায় ছাগলের খামার, একেকটির দাম ২৫ হাজার থেকে দুই লাখ

মাহাবুর রহমান মাহাবুর রহমান , হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:০৩ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০২২

দিনাজপুরের হাকিমপুর পৌরশহরের চন্ডিপুর এলাকায় রাস্তার পূর্ব পাশে একটি তিনতলা বাড়ি। বাড়ির নিচতলায় একটি এনজিও অফিস রয়েছে। ওই বাড়ির তিনতলার ছাদে বাগান নয়, ছাগলের খামার করেছেন শিহাব শাহারিয়ার মাহিম (২৮) নামের এক যুবক।

খামারটিতে ছোট-বড় ৩৫টি ছাগল রয়েছে। সাদা-কালো এবং খয়েরি রঙের ছাগলগুলো তোতাপুরি জাতের। বড় ছাগলগুলোর উচ্চতা প্রায় তিন ফিট। কানগুলো ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা। শখের বশে খামারটি করেছেন মাহিম।

ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা যুবক মাহিম প্রথমে দুটি ছাগল নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ধীরে ধীরে এখন পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক খামারে। বর্তমানে তার খামারে ৩৫টি ছাগল রয়েছে। এরই মধ্যে ২০০ ছাগল বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা। এতে একদিকে ফিরেছে সংসারের সচ্ছলতা, অন্যদিকে পূরণ হয়েছে মায়ের স্বপ্ন।

jagonews24

ছাদ খামারের গল্পের শুরুটা ২০১৪ সালের। অসুস্থ মায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের বোম্বে শহরে যান মাহিম। ফেরার পথে মায়ের আবদারে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি তোতাপুরি ছাগল কেনেন। ছাগল ছানা দুটি নিজ বাড়ির ছাদে লালন-পালন করে আসছিলেন মাহিমের মা। ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

মাহিম খামারটির নাম দিয়েছেন ‘রিসান গোট ফার্ম’। ছাগল ছানাগুলো উপযুক্ত হতে ৩-৫ মাস সময় লাগে। প্রকারভেদে ছাগল ছানা ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বড় ছাগলগুলোর ৬৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা দাম পাওয়া যায়। ছাগল পরিচর্যার জন্য দুজন লোক নিয়োগ দিয়েছেন মাহিম।

শাহারিয়ার মাহিম বলেন, বিদেশি জাতের ছাগল হলেও এটি পালনে আলাদা কোনো সমস্যা হয় না। দেশি ছাগল যা খায় এই ছাগলগুলোও তাই খায়। এর জন্য আলাদা কোনো খাদ্যতালিকা নেই।

মাহিমের বাবা আব্দুল মালেক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছোট্ট সংসারে একটিমাত্র ছেলে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়েই থাকতাম। স্ত্রী মারা যাওয়ায় তার শখের দুটি ছাগলছানা আর সন্তানকে নিয়ে চলে আমার জীবন।’

jagonews24

তিনি বলেন, ‘মাহিম একজন সফল খামারি। এতে আমার সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। আমি মনে করি আমার সন্তান এই এলাকাসহ দেশের গর্ব।’

ওই এলাকার কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, ‘বাড়ির ছাদে ফুলের বাগানের কথা শুনেছি। কিন্তু ছাগলের খামার করা যায় এই প্রথম দেখলাম। আমরা বুঝতেই পারিনি বাড়ির পাশে এত সুন্দর একটি ছাগলের খামার রয়েছে।’

রাজশাহী থেকে তোতাপুরি ছাগল নিতে আসা আসলাম হোসেন বলেন, রিসান ফার্ম থেকে ৮০ হাজার টাকায় দুটি ছাগল ছানা কিনেছি। ছাগলগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। ছাদে ছাগলের খামার দেখে নিজেকে আরও উৎসাহিত লাগছে।

jagonews24

উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. ফাইজা খাতুন বলেন, এই এলাকায় এত সুন্দর একটি বিদেশি ছাগলের খামার মানুষের নজর কেড়েছে। এটা আমাদের সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, অন্য কেউ যদি এমন ছাগলের খামার করতে চান তাহলে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদানসহ সবধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে। তবে আমার জানামতে এটি এই এলাকার একমাত্র ছাগলের খামার, যা অন্য এলাকায় নেই।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।