মায়ের মৃত্যুতে মুছে গেছে সুমির ঠিকানা!
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন সপ্তাহ ধরে মারাত্মক দগ্ধ মায়ের পাশে বসেই কাঁদতো পাঁচ বছরের শিশু সুমি। সেই মা হাসনাকেও সোমবার নিয়ে যাওয়া হলো হিমঘরে। মৃত্যু, হিমঘর বোঝে না সুমি! সে মায়ের সঙ্গে থাকতে চায়; এখন তার যে আর কোনো ঠিকানা নেই! অথচ হয়তো সবই ছিল; কিন্তু সেই ‘ঠিকানার’ ‘ঠিকানাই’ বলতে পারছে না সে।
তাই শেষ পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদফতরের সহায়তায় শিশু সুমির ঠিকানা হয়েছে যশোর সরকারি শিশু পরিবারে। যশোর জেনারেল হাসাপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অগ্নিদগ্ধ হাসনা আক্তারকে। অজ্ঞাত কোনো এক ব্যক্তি তাকে ভর্তি করে চলে যান। ওই ব্যক্তি আর ফিরে আসেননি।
মৃত্যুপথযাত্রী হাসনার পাশে দিনরাত কাঁদতো তার পাঁচ বছরের অবুঝ মেয়ে সুমি। তার কাঁন্না ও আকুতিতে আবেগে ভেসে পাশের অনেক রোগী, স্বজনরা এগিয়ে এসেছেন। ছোট শিশুর মা হাসনাকে দেখতে এসেছেন। জানতে চেয়েছেন সুমির পরিচয়। জবাবে ছলছল দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়েছে সে। তবে মাকে বাঁচানোর জন্য ছোট শিশুটির এই চেষ্টা-আকুতি শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি।
ভর্তির সময় হাসনার শরীরের ৬৫ ভাগই আগুনে ঝলসানো ছিল। যার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা যশোর জেনারেল হাসপাতালে না থাকায় তাকে রেফার করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। কিন্তু শিশু সুমির পক্ষে মাকে সেখানে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তাই ভর্তির ২৩ দিনের মাথায় সোমবার হাসপাতালে মারা যান চিকিৎসাধীন হাসনা।
হাসপাতালে ভর্তির তথ্য অনুযায়ী হাসনার বাড়ি যশোর সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামে। স্বামীর নাম তাইজুল ইসলাম তাজ। তবে পুলিশ ওই গ্রামে গিয়ে তাউজুল ইসলাম নামে কোনো ব্যক্তির সন্ধান পায়নি। গত তিন সপ্তাহ কারো কোনো কথার জবাব না দিলেও মায়ের মৃত্যুর পর সুমি জানিয়েছে, তার দাদি চুলার আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে তার মাকে। আর বাড়ি ময়মনসিংহে। তবে গ্রাম বা পিতার নাম জানতে চাইলে নির্বাক হয়ে যায় সে।
যশোর জেনারেল হাসাপাতালের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান লর্ড জানান, হাসনার শরীরের ৬৫ ভাগই দগ্ধ ছিল। হাসপতাল থেকে তাকে সাধ্য মতো চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন হাসনা মারা যাওয়ার পর লাশ হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে। আর সুমিকে হাসপাতালের সমাজসেবা কর্মকর্তা ইতি সেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা সমাজসেবা অফিসের জুনিয়র হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা জামসেদ আলী জানান, সুমি বর্তমানে যশোর সরকারি শিশু পরিবারে রয়েছে।
মিলন রহমান/বিএ