বৃষ্টি না হলে খাদ্য সংকট হতে পারে বান্দরবানের জুমচাষিদের
ভরা বর্ষা মৌসুমেও তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচণ্ড রোদে বান্দরবানে ধানসহ পাহাড়ের ঢালুতে চাষ করা প্রায় সব জুম ফসলের ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে সবুজ ফসল দিন দিন হলুদ হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় চলতি বছর জুমচাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার প্রত্যন্ত প্রায় সব অঞ্চলে জুমচাষ হলেও রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। জুমে ধান, মরিচ, তিল-তিসি, ভুট্টাসহ প্রায় ৪০ ধরনের ফসল চাষ করা হয়। যা পাহাড়ে বসবাসকারী জুম চাষিদের পুরো বছরের খাদ্যের জোগান দেয়। প্রকৃতির এমন বিরূপ প্রভাবে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হলে ভবিষ্যতে তাদের খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
রোয়াংছড়ি, রুমা ও চিম্বুক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনাবৃষ্টি আর প্রখর রোদের কারণে মাটি শুকিয়ে জুমের প্রধান ফসল ধানসহ আবাদ করা অন্যান্য ফসলের পাতা হলুদ হয়ে নেতিয়ে পড়েছে।
রোয়াংছড়ি শুকনাঝিরি এলাকার জুমচাষি সুখেল তঞ্চগ্যা বলেন, তিনি প্রায় ১০ কানি জমিতে জুমচাষ করেছেন। এবার দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় চাষও দেরিতে করতে হয়েছে। তারপরও নিয়মিত বৃষ্টির অভাবে ফসলগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠছে না। প্রচন্ড রোদে বেশিরভাগ চারা হলুদ হয়ে মারা যাচ্ছে। এমন হতে থাকলে আগামী বছর না খেয়ে উপোস থাকতে হবে।
এক হাজার টাকায় ৮০ শতক জমি বর্গা নিয়ে জুমচাষ করেছেন রোয়াংছড়ি বেক্ষ্যং মৌজা এলাকার নারী জুমচাষি মেসিং মারমা। বৃষ্টি না হওয়ায় তার জুম ক্ষেতের ধানগাছ মারা যাচ্ছে।
মেসিং মারমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা খুবই গরিব মানুষ। ফসল ভালো না হলে কীভাবে ভাত খেয়ে বেঁচে থাকবো, সেই চিন্তায় আছি।’
এবার পাঁচ একর জমিতে তিনি জুমচাষ করেছেন রুমা উপজেলার কমলা বাগান এলাকার জুমচাষি ম্যা প্রু। তিনি বলেন, ‘সাধারণত জুমচাষের ফসল বেড়ে ওঠে বর্ষাকালে। আগস্ট মাসে ফসল ঘরে তোলা হয়। কিন্তু ভরা বর্ষায় বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। জুমের ফসল যতটুকু বেড়েছে, সেটা জুন মাসের বৃষ্টিতে বড় হয়েছে। স্বাভাবিক বেড়ে না ওঠায় আশানুরূপ ফসল পাওয়া আশঙ্কা রয়েছে।’
চিম্বুক এলাকার বিধবা নারী জুমচাষি সংরুম ম্রো বলেন, খরার কারণে ফসলের চারা যতটুকু বেড়ে ওঠার কথা ততটুকু বেড়ে ওঠেনি। আশানুরূপ ফসল না পেলে আগামী বছর খাদ্য সংকটে অনাহারে দিন কাটাতে হবে।’
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, জেলায় ৮ হাজার ৭৪৭ হেক্টর জমিতে জুমচাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪২৯৭ মেট্রিক টন। তবে বৃষ্টি কম হওয়ায় মাটির উপরিস্তর ক্ষয় হয়নি। এ কারণে ভালো ফলন হওয়ার আশা করছেন তিনি।
এসআর/এমএস