মাথাভাঙ্গা নদীতে হঠাৎ ভেসে উঠছে মরা মাছ, কারণ নিয়ে কৌতূহল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ০২ আগস্ট ২০২২

চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীতে হঠাৎ ভেসে উঠেছে প্রচুর পরিমাণ মরা মাছ। নদীর তীরে খাবি খাচ্ছে ছোট-বড় অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির মাছ। সোমবার (১ আগস্ট) মধ্যরাত পর্যন্ত নদীতে নেমে এসব মাছ ধরেন অসংখ্য মানুষ। হঠাৎ করেই মাছ নদীর তীরবর্তী পানিতে খাবি খাচ্ছে দেখে মাছ ধরা শুরু হয়। নদীতীরে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীদেরই ভিড় জমে।

সোমবার দুপুর থেকে একটু একটু করে মরা মাছ নদীর পানিতে ভাসতে থাকলেও রাত থেকে বেশ কয়েকটি জায়গায় মাছ ভাসতে দেখে ভিড় করতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ।

এলাকাবাসী জানান, দুপুরে প্রথমে আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ অদূরবর্তী কৃষ্ণপুর এলাকায় মাথাভাঙ্গা নদীতে তেলের মতো কিছু একটা ভাসতে দেখা যায়। একই সঙ্গে নদীর তীরবর্তী পানিতে ছোট-বড় মাছ খাবি খাচ্ছে দেখে কেউ ঠেলা জাল, কেউ মশারির অংশ, কেউ শাড়ি কিংবা গামছা নিয়ে নদীতে নেমে মাছ ধরতে শুরু করেন।

মাথাভাঙ্গার স্রোত ক্রমশ হাজরাহাটীর দিকে এলে একইভাবে মাছ খাবি খাচ্ছে দেখে মানুষের ঢল নামে। হাজরাহাটির পর আলুকদিয়া, আকন্দবাড়িয়া হয়ে স্রোত সন্ধ্যার দিকে পৌঁছায় হাতিকাটা তালতলায়।

মাথাভাঙ্গা নদীতে হঠাৎ ভেসে উঠছে মরা মাছ, কারণ নিয়ে কৌতূহল

খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল বাড়ে। তাদের কেউ বলেন, নদীতে পাটজাগ দেওয়ার কারণেই পানি বিষক্ত হয়ে মাছ খাবি খেতে শুরু করেছে। আবার কারও মতে এটি বিষ দিয়ে মাছ ধরার ষড়যন্ত্রও হতে পারে। এসব কৌতূহলের জবাব না মিললেও রাত ১২টা পর্যন্ত মাথাভাঙ্গা নদীতে অসংখ্য মানুষকে মাছ ধরতে দেখা গেছে।

নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বয়স্ক কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশির দশকে একবার মাথাভাঙ্গা নদীর পানি দূষিত হতে দেখা যায়। ওইসময় অনাবৃষ্টির কারণে নদীতে পাটজাগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে। নদীর পানি চরমভাবে দূষিত হয়ে সবরকমের মাছ ভেসে ওঠে। নদীর গভীরে মাটিতে শরীর ঢুকিয়ে রাখা কুঁচেও নদীতীরে খাবি খেতে দেখা যায়। ওইসময়ও মাছ ধরার হিড়িক পড়ে।

নদীতীরের বাসিন্দারা জানান, মাথাভাঙ্গা নদীতে মাছ ভেসে উঠেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকে মাছ ধরার জন্য নদীর দিকে ছুটে আসেন। বালতি কিংবা গামলা ভরে মাছ নিয়ে যান। পুঁটি, টেংরা, বাইম, বেলে প্রভৃতি দেশীয় প্রজাতির মাছ মরে ভেসে ওঠে।

প্রত্যক্ষদর্শী লিয়াকত মিয়া বলেন, কেউ দুই কেজি, কেউ তিন কেজি মাছ ধরতে পেরেছেন। তবে রাত হওয়ায় ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে যাচ্ছিল না। তা নাহলে আরও মাছ ধরা যেতো।

মাথাভাঙ্গা নদীতে হঠাৎ ভেসে উঠছে মরা মাছ, কারণ নিয়ে কৌতূহল

এ বিষয়ে মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীর পানি নানা কারণে দূষিত হচ্ছে। আমরা বারবার বলছি, মাথাভাঙ্গা নদীকে বাঁচাতে হবে। পৌরসভা শহরের আবর্জনা ফেলে নদীতে। ড্রেনের পানি গিয়ে পড়ছে নদীতে। মাছ মরার বিষয়টি তদন্ত করে জেলা প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাজিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শোনার পর নদী পরিদর্শন করা হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলাতেও একটি জায়গায় এরকম মাছ মারা যাচ্ছে বলে জানা গেছে। দামুড়হুদা ব্রিজ থেকে নদীতে দেখা যাচ্ছে, পানির ওপর এক ধরনের কালো স্তর। বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করা হবে। মরা মাছ না খেতে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, মৎস্য বিভাগকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য বলা হয়েছে।

সালাউদ্দীন কাজল/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।