৪১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একলিমার খোঁজ মিললো পাকিস্তানে
স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে তিন সন্তানের জননী একলিমা বেগম (৬৫)। ১৯৮১ সালে হারিয়ে যান তিনি। সেসময় পরিবারের সদস্যরা বহু খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি একলিমার।
দীর্ঘ ৪১ বছর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালীতে খোঁজ মিলেছে একলিমা বেগমের। কিন্তু কীভাবে তিনি সেখানে গেলেন সে কথা বলতে পারছেন না কেউই। একলিমার কেবল মনে আছে তার বাবা-মাসহ ভাই ও তালার গঙ্গারামপুর গ্রামের নামটি।
পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালীতে পরিবারের সঙ্গে অবস্থানরত একলিমা মৃত্যুর আগে অন্তত একবার নিজ মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে সেখানকার পরিবারের সন্তানরা তা ভিডিও করে ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন।
তাদের করা ভিডিওটি চোখে পড়ে একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকিরায়া শেখের। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো তার দাদা-বাবা ও চাচাদের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন। ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন যে ভিডিওর একলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুপু। পরে তারা পারিবারিকভাবে ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন একলিমার সঙ্গে।
একলিমা বেগমের ছোট ভাই ইব্রাহিম শেখ (৫০) জাগো নিউজকে বলেন, সেসময় আমাদের অনেক অভাব ছিল। তার স্বামী মারা গেলে সে যেন প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিল। পরে কীভাবে যে পাকিস্তানে চলে যায় তা আমরা কেউই জানি না। সম্প্রতি তার খোঁজ পেয়েছি। আমরা চাই সে ফিরে আসুক।
একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকিরায়া শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ফুপু একলিমার খোঁজ পাই। তারপর থেকে তার সঙ্গে বাড়ির সবার নিয়মিত কথা হচ্ছে। তিনি চান আমাদের এখানে আসতে। এজন্য তাদের কাছে ইনভাইটেশন লেটার পাঠানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অ্যাম্বাসি সহযোগিতা করলে তিনি আসতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফুপুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি পাকিস্তানের একটি সেল্টার হোমে ছিলেন। সেখানে মুহাম্মদ সিদ্দিক নামের একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তারা বিয়ে করেন। মুহাম্মদ সিদ্দিক কয়েকবছর আগে মারা গেছেন। সেখানে তাদের পরিবারে দুটি ছেলে এবং দুটি মেয়ে রয়েছে। আমরা চাই তারা এখানে বেড়াতে আসার সুযোগ পাক। এজন্য আমরা সবধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি।’
একলিমা বেগমের প্রথম ঘরের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে বাংলাদেশে। মেয়ে দুটি এখন স্বামীর সংসারে। আর ছেলে হেকমত আলী কাজ করেন ঢাকার একটি কারখানায়।
মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় আব্বাকে হারিয়েছি। উনার কবরটা এখনো আমাদের বাড়িতে আছে। আমার মারে এত বছর পরে পাইছি। তারে আপনারা ফিরিয়ে এনে দেন। আমি তারে সারাজীবন দেখবো।’
এ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসান্ত কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তার পরিবার থেকে লিখিত আবেদন করলে আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানাবো।
আহসানুর রহমান রাজীব/এসআর/জেআইএম