স্কুল কমিটির নির্বাচন
এমপি মমতাজের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ২ ভোটারকে পেটানোর অভিযোগ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনে দুই অভিভাবক সদস্যের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে মহিউদ্দিন খান মঞ্জু ও মিজানুর রহমান চৌধুরী রতন নামে দুজন ভোটার আহত হয়েছেন। তাদের জেলার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (২৪ জুলাই) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে স্কুল প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। হামলা ও মারধরের ঘটনার পর ওই স্কুল কমিটির সভাপতি পদের নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেন প্রিজাইডিং অফিসার।
অভিযোগ উঠেছে, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের অনুসারীরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ নির্বাচনে মমতাজ নিজে থেকে প্রার্থী না হলেও তার সমর্থকরা তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পরই হট্টগোল ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’
জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চবিদ্যালয়ে অভিভাবক সদস্য পদে ভোট হয়। ওই ভোটে চারজন অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২৪ জুলাই সভাপতি পদে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে এমপি মমতাজ এবং জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
নির্বাচনে প্রার্থী হন দেওয়ান সাইদুর রহমান। অন্যদিকে এমপি মমতাজ উপস্থিত না থাকলেও তার সমর্থকরা প্রার্থী হিসেবে মমতাজের নাম ঘোষণা করেন। দুপুরে দুপক্ষের লোকজন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে। পুলিশ দুপক্ষের লোকজনকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাগবিতণ্ডা হয়।
বিকেল ৩টার দিকে ৯ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জনের উপস্থিতিতে প্রিজাইডিং অফিসার সভাপতি নির্বাচনের সভা শুরু করেন। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ অভিভাবক সদস্য মহিউদ্দিন মঞ্জু ও মিজানুর রহমানকে বিদ্যালয়ের তিনতলা থেকে নিচতলায় সভাকক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
এসময় জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদেরকে লক্ষ্য করে বিএনপি-জামায়াত ম্লোগান দিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা দুই অভিভাবক সদস্যকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে যান।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হরিরামপুর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা তপসী রাবেয়া ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ বহিরাগতদের বের করে দেন। এরপর প্রিজাইডিং অফিসার সভা শুরু করলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার শঙ্কায় তিনি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ফিরোজ বলেন, ‘আহত মহিউদ্দিন মঞ্জু যুবদল নেতা। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হামলা হয়েছে। এতে তিনি আহত হয়েছেন।’
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিবালয় উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাহিদ, যিনি বর্তমানে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি স্কুলে এসে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ জড়িয়েছেন। ছাত্রলীগ এ হামলায় জড়িত না।’
তবে হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্কুল কমিটির এ নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই এমপি মমতাজ বেগমের পক্ষের লোকজন ও পুলিশ ম্যানেজিং কমিটির ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছেন। নির্বাচনের দিন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে এমপির লোকজন দুজন অভিভাবক সদস্যকে মারধর করেছেন।’
জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ-২ আসনের এমপি মমতাজ বেগম বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও নির্বাচিত সদস্যরা আমাকে সভাপতি প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি নিজে ওই বিদ্যালয়ে সভাপতি পদে প্রার্থীতা ঘোষনা করিনি। বিদ্যালয়ের দুর্নীতি ঠেকাতে হয়তো আমার নাম প্রস্তাব করতে পারেন। চারজন অভিভাবক সদস্যসহ ৯ জন ভোটার গণতান্ত্রিকভাবে যাকে সমর্থন করবেন, তিনিই সভাপতি নির্বাচিত হবেন।’
বি এম খোরশেদ/মানিকগঞ্জ