প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সাড়ে পাঁচ হাজার খাতা উধাও
বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সাড়ে পাঁচ হাজার খাতা রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। খাতাগুলো ছিলো উপজেলা শিক্ষা অফিসারের হেফাজতে। এতে ফলাফল পুনঃমুল্যায়নের জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মূল্যায়িত ফলাফল প্রকাশ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বগুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, শিবগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের হেফাজতে থাকা সাড়ে ৫ হাজার খাতা উধাও হওয়ার ঘটনাটি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে গত ১৯ জানুয়ারি। এরপর প্রথমে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, উধাও হওয়া খাতার মধ্যে ফলাফল পুনঃমুল্যায়নের আবেদনের খাতা বেশ কয়েকটি রয়েছে। যার কারণে গত ২৪ জানুয়ারি খাতা উধাও হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি-২০১৫ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর খাতাগুলো বস্তায় ভরে শিবগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গোডাউনে রাখা হয়। ওই গোডাউনে তালা দিয়ে ১টি চাবি উপজেলা শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান এবং অপর একটি চাবি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু রায়হানের কাছে রাখা ছিলো।
এর আগে ৩১ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি-২০১৫ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী যাদের ফলাফল আশানরুপ হয়নি তাদেরকে ২০০ টাকা মুল্যায়ন ফি জমা সাপেক্ষে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয় খাতা পুনঃমুল্যায়নের আবেদন করতে। সেই অনুযায়ি বগুড়া জেলার ১২ উপজেলা থেকে এক হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। ১৯ জানুয়ারির মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আবেদনকারীদের খাতাগুলো জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানোর শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় এবং ২১ জানুয়ারি পুনঃমুল্যায়নের ফলাফল ঢাকায় পাঠানোর শেষ তারিখ ছিল। বিভিন্ন উপজেলা থেকে খাতা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হলেও শিবগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাদের খাতা হারিয়ে যাবার কারণে প্রায় শতাধিক খাতা পাঠাতে ব্যর্থ হন। আর এই সময়ই খাতা উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানতে পারেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিশ্বজিৎ কুমার সাহাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, শেরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল কাউয়ুম ও কাহালু উপজেলা শিক্ষা অফিসার সারোয়ার হোসেন।
সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিশ্বজিৎ কুমার সাহা জানান, তারা গত ২৫ জানুয়ারি ঘটনাস্থল তদন্ত করে জানতে পারেন শিবগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসের তত্বাবধানে শিবগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোডাউনে ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার খাতা ২৮টি বস্তায় ভরে রাখা হয়। সেখান থেকে ৩টি বস্তা উধাও হয়ে যায়। উধাও হওয়া তিনটি বস্তায় সাড়ে ৫ হাজার খাতা ছিল।
তিনি বলেন, তদন্তকালে তারা দেখেছেন, গোডাউনের তালা অরক্ষিত ছিলো। বিষয়টি রহস্যজনক।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান জানান, তিনি খাতা হারানোর বিষয়টি পরে জেনেছেন। কিভাবে হারালো তা বলতে পারবেন না। তবে এ ঘটনায় তিনি শিবগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
লিমন বাসার/ এমএএস