দেরিতে খুলছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো


প্রকাশিত: ০৫:৩৮ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

ঠাকুরগাঁওয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না সংশিষ্ট এলাকার সুবিধাভোগীরা। এসব এলাকায় অবস্থিত বেশির ভাগ কেন্দ্রই নির্ধারিত সময়ের পর খোলা হয় এবং সময়ের আগের তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রত্যেকটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কিন্তু এই কেন্দ্রের বিষয়ে স্থানীয় মানুষের পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় আশানুরূপ সাড়া জাগাতে পারেনি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও কমিউনিটি ক্লিনিকে পর্যাপ্ত ওষুধসহ কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা নিয়মিত দেয়া হচ্ছে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো খোলা থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রগুলো খোলা হয় ১০টায় আর বন্ধ হয়ে যায় ২টার আগেই। তাই অনত্র চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের। এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

সদর উপজেলা এবং পীরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ১০টা পর্যন্ত অধিকাংশ ক্লিনিক খোলা হয়নি। পীরগঞ্জ উপজেলার জাবর হাট স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণে অবস্থান করে দেখা গেছে তখন পর্যন্ত ওই কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা হয়নি। একটু পরেই ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা একজন এসে হাজির হলেন। দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি উপজেলায় মিটিং ছিল তাই আসতে একটু দেরি হয়েছে বলে জানান।

পীরগঞ্জ উপজেলার ইনুয়া গ্রামের আবদুল গফুর (৫০) বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য সরকার গ্রামে গ্রামে ডাক্তার দিয়েছে। অথচ চিকিৎসা নিতে আট মাইল পথ পার হয়ে পীরগঞ্জ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।’

একান্নপুর গামের মো. বশিরউদ্দীন (৫৪) বলেন, ‘ডাক্তার বসেন শুনে একান্নপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে কয়েক দিন থেকে ঘুরছি। অথচ পাঁচ দিন ঘুরেও ডাক্তারের দেখা পাইনি।’ একই ধরনের কথা বলেন বৈরচুনা গ্রামের তবারক আলী (৪৫), সেনগাঁও গ্রামের রবি কুমার রায়সহ (৫০) আরও অন্তত ১০ জন।

সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের প্রবাল, সুখানপুখুরী ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম, পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট গ্রামের রমজান আলীসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে আমরা তেমন কোন সেবা পায় না। দেখা গেছে নারমাল ডেলিভারির জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে রোগীকে নিয়ে আসলেও চা খেতে তাদের পয়সা দিতে হয়। তারপরও আবার সময়মত কেন্দ্র খোলা না পাওয়ায় রোগীকে নিয়ে যেতে হয় অনেক দূরে।

এ বিষয়ে জাবরহাট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের কেন্দ্রে সিজারিয়ান কোনো অপারেশন হয় না। আর নির্ধারিত সময়ের আগে কেন্দ্র বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, মিটিংয়ে থাকায় কেন্দ্র বন্ধ ছিল কিন্তু নিয়মিত কেন্দ্র খোলা থাকে। এছাড়া বিনামূল্যে যেসব সেবা প্রদান করার কথা তা আমরা আমাদের সাধ্যমত দিয়ে যাচ্ছি। আর অন্যান্য কেন্দ্র কর্মকর্তারা কোনো তথ্য না দিয়ে এড়িয়ে যান।

সরকারিভাবে জেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো থেকে বিনা মূল্যে গর্ভবতী সেবা, স্বাভাবিক প্রসব সেবা, জটিল প্রসব সেবা, সিজারিয়ান অপারেশন, গর্ভোত্তর সেবা, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, ভিটামিন এ ক্যাপসুল বিতরণ ও জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল প্রদানসহ মোট ২৭টি সেবা প্রদান করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রোগীদের।

Thakurgaon-Union

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আওতায় ঠাকুরগাঁও জেলার ৫টি উপজেলায় সর্বমোট ৫০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৯টি, বালিয়াডাঙ্গীতে ৮টি, পীরগঞ্জে ১০টি, রানীশংকৈলে ৮টি ও হরিপুর উপজেলায় ৫টি।

সার্বিক বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক তরিকুল ইসলাম সেবা ঘাটতির কথা স্বীকার করে জানান, জনবল সঙ্কটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে জনবল বাড়ানো হলেও এসব সমস্যা থাকবে না। আর সিজারিয়ান অপারেশনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা জরুরি রোগীদের সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য পাঠানো হয় হাসপাতালে। তবে যেসব কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের আগে বন্ধ হয়ে যায় তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এই উপ-পরিচালক।

রবিউল এহসান রিপন/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।