ফতুল্লায় খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ


প্রকাশিত: ০৩:১২ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুর-ভোলাইল সরকারি খালটি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দখল আর দূষণ দেখে আর বোঝার কোনো উপায় নেই এটি খাল নাকি ড্রেনের সুয়ারেজ লাইন। খালটি দখলের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিযোগিতা করছেন। তাল মিলিয়ে খাল দখল করছেন। এমনকি শিল্প-কারখানার মালিকরা খাল দখল করে বিশাল আকারে দেয়াল নির্মাণ করে নিজেদের দখলে নিয়ে যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাশিপুর দেওয়ানবাড়ী-ভোলাইল খালটিতে বসতবাড়ির আবর্জনা আর শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে খালের পানি এতটাই দূষিত হয়ে গেছে যে, সেখানে ক্ষণিকের জন্য দাঁড়িয়ে থাকলে দুর্গন্ধ আর মশার কামড়ে যেকোনো সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর এই খাল দিয়ে এক সময় চলাচল করতো মালবাহী বড় বড় নৌযান, পাওয়া যেতো সুস্বাদু মাছ। জাল ফেললেই উঠতো ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ। এই মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন জেলেরা। খালকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল জেলে সম্প্রদায়ের বাসস্থান। কিন্তু এখন স্থানীয়দের দখলদারিত্বে হারিয়ে গেছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী কাশিপুর, ভোলাইল, দেওয়ানবাড়ির খাল।

এলাকাবাসী আরো জানান, খালটির ঐতিহ্য ও রক্ষণাবেক্ষণের নৈতিক দায়িত্বরত ব্যক্তি কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোমেন শিকদারের স্বেচ্ছাচারিতা আর দূষণের কবলে চলে গেছে এই বৃহৎ খালটি। খালটিতে নান্দনিক কিছু করা তো দূরের কথা কখনো দখলমুক্ত করারও উদ্যোগ নেয়নি চেয়ারম্যান মোমেন শিকদার। উল্টো অর্থের বিনিময়ে বেশ কয়েকজন বাড়ি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিককে উক্ত খাল দখলে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, যখন প্রাচ্যের ডান্ডি ছিল নারায়ণগঞ্জ তখন দেশের বিভিন্ন স্থান হতে শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত টানাবাজার, মন্ডলপাড়া, বাবুরাইল খাল দিয়ে কাশীপুরে মালবাহী বৃহৎ নৌযানের যাতায়াত ছিল। দেওয়ানবাড়ি খালের মাছ খুবই সুস্বাদু ছিল। এখানে এতই মাছ পাওয়া যেত যার ফলে আস্তে আস্তে এখানে মৎস্যজীবীদের বাসস্থান জেলেপাড়া গড়ে ওঠে। তবে বর্তমানে সেই জেলেপাড়া আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও নেই আর ঐতিহ্যবাহী দেওয়ানবাড়ি-ভোলাইল সংযোগ খাল। ছোট-বড় দোকান, সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্লাবের নামে খাল দখল হয়ে গড়ে উঠেছে শতশত অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু সবকিছু দেখেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করেন তারা।

"
কাশিপুর ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান মোমেন শিকদার জানান, খালটি আমাদের ঐতিহ্য। খাল দখলমুক্ত রাখতে শুধু চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, এলাকার বাসিন্দা হিসেবে আমার দায়িত্ব রয়েছে। যারাই খাল দখল করে রেখেছনে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর এই খালটির ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার বলার পরও সহকারী কমিশনার (ভুমি) এসিল্যান্ড কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

নারায়ণগঞ্জ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম আলী বেগ জানান, কাশিপুর-ভোলাইলের খাল দখলের ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। এমনকি প্রশাসনিকভাবে আমাকে অবগত করা হয়নি। যেহেতু বিষয়টি সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে জানতে পারলাম আশা করছি আগামী রোববারের মধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মো. শাহাদাত হোসেন/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।