যশোরে জমেনি চামড়ার হাট, দাম নিয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা
গত কয়েক বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার যৌক্তিক দাম মেলেনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাটে। ঈদ-পরবর্তী প্রথমহাট মঙ্গলবার (১২ জুলাই) এখানে চামড়ার সরবরাহ ছিল কম। গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কমে। ফলে লোকসানে পড়বেন বলে মনে করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
তবে আড়তদারদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনছেন তারা। গত বছরের তুলনায় এবছর লবণ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চামড়ার দাম নিয়ে তাদের মাঝেও রয়েছে অসন্তুষ্টি।
ঈদের পর মঙ্গলবার ছিল প্রথম হাট। এদিন হাট ভালোভাবে জমেনি। তারপরও আট থেকে ১০ হাজার চামড়া আসে হাটে। বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে আনেন। কিন্তু আশানুরূপ দাম পাননি বলে অভিযোগ তাদের। বিশেষ করে ছাগলের চামড়া এক প্রকার বিনামূল্যে দিয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছেন তারা। এদিন বাজারে গরুর চামড়া মানভেদে ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আর ছাগলের চামড়া ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।
নড়াইল থেকে ১০০ গরুর চামড়া ও ১৩টি খাসির চামড়া নিয়ে হাটে আসেন হীরামন বিশ্বাস। তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। খাসির ১৩টি চামড়া পাঁচ টাকা হিসেবে ৬৫ টাকা হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে ১৩টি চামড়ায় ৬০ টাকা দিয়েছেন স্থানীয় এক ক্রেতা।
দাম কম পাওয়ার কারণ হিসেবে হীরামন বলেন, বাইরের ব্যাপারী না এলে দাম বাড়ে না। ক্রেতা নেই বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক প্রকার পানির দামে চামড়া কিনেছেন বলে দাবি তার।
নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা থেকে ৪০০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে আসেন নিমাই বিশ্বাস। তিনি জানান, সবচেয়ে ভালোমানের প্রতি পিস চামড়া ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তবে, গাভির চামড়া বিক্রি করেন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।
৪৫টি গরু ও ৪৫টি ছাগলের চামড়া নিয়ে আসেন যশোরের কেশবপুরের বিশ্বনাথ নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি গরুর ৩৫টি চামড়া ৭০০, ছয়টি ১ হাজার ১০০ ও চারটি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। বিশ্বনাথ ৪০ টাকা দরে ছাগলের চামড়া কিনে কিছু আট টাকা ও কিছু পাঁচ টাকায় বিক্রি করেন বলে জানান। হতাশার সুরে ব্যবসা ছেড়ে দেবেন বলেও জানান তিনি।
আরেক চামড়া ব্যবসায়ী ফুলচান দাস বলেন, আমরা এক হাজার পিস ছাগলের চামড়া কিনেছিলাম। চামড়ায় লবণ দেওয়া ছিল। লবণের দামও বেশি এবং শ্রমিক না পাওয়ায় প্রায় ২০০ পিস চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ২০ হাজার টাকা লস হয়েছে। এখন এই পচা চামড়া অন্যত্র নিয়ে পুঁততে হবে। তাতে আরও হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হতে পারে।
রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। ক্ষুদ্র বিক্রেতারা বেশি দামে চামড়া কিনলে লোকসান তো দিতে হবেই। তবে, কিছু ছাগলের চামড়া প্রসেসিংয়ের অভাবে নষ্ট হয়েছে বলে জেনেছি।
রাজারহাট মোকামে ছোট-বড় মিলিয়ে তিন শতাধিক আড়ত রয়েছে। যেখানে প্রায় ২০ হাজার ব্যবসায়ী এর ওপর নির্ভরশীল। এখানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ছাড়াও ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর এবং ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন।
মিলন রহমান/এমআরআর/এএসএম