কোচিং-স্মার্টফোনের বিষয়ে যা বললেন ঢাবিতে প্রথম হওয়া নোয়েল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী নাহনুল কবীর নোয়েল শুধু ইউসিসিতে কোচিং করেননি। তার ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির হাতেখড়ি ফরিদপুর শহরের তুষার’স কেয়ার নামের একটি কোচিং সেন্টারে।
জাগোনিউজ২৪.কম-এ তথ্য জানিয়েছেন নাহনুল কবীর নোয়েল। একই তথ্য দিয়েছেন তার মা নাজমুন নাহার।
এছাড়া নোয়েল নিজে স্মার্টফোন ব্যবহার না করলেও তার একাধিক ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার রয়েছে। লেখাপড়ায় প্রয়োজন হলে মা-বাবার স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন তিনি।
নাহনুল কবীর নোয়েল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর কোচিং সেন্টার ও তার স্মার্টফোন ব্যবহার না করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। একাধিক কোচিং সেন্টার দাবি করে নোয়েল তাদের শিক্ষার্থী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী নাহনুল কবীর নোয়েলের মা-বাবা দুজনই সরকারি চাকুরিজীবী। বাবা প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল কবির চাঁদপর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ। মা নাজমুন নাহার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) মায়ের কর্মস্থল ঘিওরে কথা হয় নাহনুল কবীর নোয়েলের সঙ্গে।
কোচিং বিতর্ক নিয়ে নাহনুল কবীর নোয়েল জাগো নিউজকে জানান, কলেজে নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রথমবর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। ২০১০ সালে মেধা যাচাই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফরিদপুর শহরের তুষার’স কেয়ার নামের একটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত হন। ফরিদপুরে থাকা পর্যন্ত সেখানে নিয়মিত কোচিং করতেন।
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর নোয়েল ঢাকায় চলে আসেন। এরপর ইউসিসির (ইউনিভার্সিটি কোচিং সেন্টার) ফার্মগেট শাখায় ভর্তি হন। সেখানে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ক্লাস করেন। একই সঙ্গে তুষার’স কেয়ারের বি-২ ব্যাচের অনলাইন পরীক্ষায়ও অংশ নেন নোয়েল।
নোয়েল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কোচিংয়ে হাতেখড়ি তুষার’স কেয়ারেই। ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগ পর্যন্ত তারা নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। একই সঙ্গে পাঁচমাস কোচিং করেছি ইউসিসিতে। তাই আমার সাফল্যের পেছনে দুটি কোচিংয়েরই অবদান রয়েছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। একই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাই অন্যান্য শিক্ষকদের প্রতি যারা বিভিন্ন সময় আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।’
নোয়েলের মা নাজমুন নাহার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর ইউসিসি কর্তৃপক্ষ নোয়েলকে তাদের স্টুডিওতে নিয়ে বক্তব্য রেকর্ড করে। প্রথমস্থান অধিকারের পর ছেলের ভেতরে উত্তেজনা কাজ করছিল। ক্যামেরায় বক্তব্য রেকর্ড করার সময় কিছুটা নার্ভাস ছিল। ইউসিসি কর্তৃপক্ষ কৌশলে তার ছেলের কাছ থেকে বক্তব্য নেয় একমাত্র ইউসিসি ছাড়া আর অন্য কোথাও সে কোচিং করেনি; ইউসিসিই তার সাফল্যের দাবিদার। পরে তারা বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে নোয়েলের সাফল্যের পেছনে দুটি কোচিং সেন্টারেরই অবদান রয়েছে।’
ঢাবিতে ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া নাহনুল কবীর নোয়েলের কোনো স্মার্টফোন নেই—এমন খবরও বেশ সমালোচিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ বিষয়টিও জাগো নিউজের কাছে পরিষ্কার করেন নোয়েল।
নোয়েল বলেন, তার নিজের কোনো স্মার্টফোন নেই এটি সত্য। তবে একাধিক ল্যাপটপ ও কম্পিউটার রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করেই লেখাপড়া চালিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুব একটা পছন্দ করেন না।
তিনি আরও বলেন, বাবার কাছে ছোটবেলা থেকেই তিনি কস্পিউটার চালানো শিখেছেন। ফোনের চেয়ে পিসিতে কাজ করেই সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নিজে বাটন ফোন চালান। কখনো স্মার্টফোনের জরুরি প্রয়োজন হলে মা-বাবারটা নেন।
নোয়েল আরও জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হবেন। মা-বাবার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন একজন বিচারক হওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণে সবার দোয়া চেয়েছেন তিনি।
নোয়েলের মা নাজমুন নাহার জানান, তার ছেলে ছোটবেলা থেকেই খুব শান্তশিষ্ট। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। রোজা রাখেন। পড়ালেখার প্রতি খুবই আগ্রহ। নোয়েল রুটিনমাফিক পড়ালেখার পাশাপাশি শৃঙ্খল জীবনযাপন করেন।
নাজমুন নাহার বলেন, ‘নোয়েলের বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার, আমি কৃষিবিদ। তাই চেয়েছি, ছেলে আইন ও বিচার বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হোক।’
খুলনার রোটারি স্কুল থেকে প্রাথমিকের পাঠ শেষ করেন নোয়েল। পরে তার বাবা খুলনা থেকে ফরিদপুরে বদলি হলে ভর্তি হন ফরিদপুর জিলা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মানবিক বিভাগে।
মেধাবী নাহানুল কবীর নোয়েল ২০০২ সালে ময়মনসিংহ শহরে চরপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের ভাবোখালী ইউনিয়নের ঘাঘড়া গ্রামে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের অধীনে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করেন নোয়েল। ভর্তি পরীক্ষায় ৯৮ নম্বরে উত্তর লিখে ৯৬.৫ পেয়ে তিনি প্রথম হন।
এসআর/এমএস