রাজশাহীতে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা
রাজশাহী অঞ্চলে নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় ২০১৫ সালে এ আত্মহত্যার সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানা গেছে।
আর আত্মহত্যার কারণ হিসেবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহের জের, সংসারে অভাব-অনটন, পরকীয়া প্রেম ও যুবক-যবতীদের পছন্দমত বিয়ে না দেয়াকে দায়ী করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করা মানুষদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ছেলেদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং মেয়েদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এছাড়া কয়েকজন কিশোরীও রয়েছে এই তালিকায় যাদের বয়স ১৩ থেকে আঠার বছর বয়সের মধ্যে।
রামেক হাসপাতালের তথ্যকেন্দ্রের অফিস সহকারী নাজিম উদ্দিনের দেয়া তথ্য মতে, গত ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ১৮৩ জন নারী ও পুরুষ রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। নারী ও পুরুষরা প্রধাণত দুইভাবে আত্মহত্যা করে থাকেন। এর মধ্যে আত্মহত্যার একটি ধরণ হচ্ছে গলায় ফাঁস ও আরেকটি হচ্ছে বিষপান। রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যুবরণকারী নারীদের মধ্যে অধিকাংশরই বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যত নারী মারা গেছেন এর মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছেন ৫জন এবং বিষপান করে মারা গেছেন ৪৯ জন নারী।
গত জানুয়ারি মাসে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭ জন, মার্চে ১১ জন, এপ্রিলে ৮ জন এবং মে মাসে ৯ জন, জুন মাসে ১৯ জন, জুলাই মাসে ১৮ জন, আগস্ট মাসে ১৩ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ২৩ জন, অক্টোবর মাসে ১০ জন, নভেম্বর মাসে ১৭জ ন, এবং ডিসেম্বর মাসে ১৪ জন।
গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে জানুয়ারি মাসে ১ জন, ফেব্রুয়ারীতে ১ জন, মার্চে ০, এপ্রিল ০ এবং মে মাসে ৩ জন, জুন মাসে ৩ জন, জুলাই মাসে ৩ জন, আগস্ট মাসে ১ জন, সেপ্টেমবর মাসে ৩ জন, অক্টোবর মাসে ৪ জন, নভেম্বর মাসে ১ জন এবং ডিসেম্বর মাসে ০ জন।
এদিকে, গত এক বছরে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য ছিল। এর মধ্যে নাটোরের গুরুদাসপুরে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী-স্ত্রীর এক সঙ্গে বিষপান এবং স্ত্রীর করুণ মৃত্যু। আরকটি ঘটনা ছিল গত ২৮ মে রামেক হাসাপাতালের টয়লেটে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা।
ঘটনা সম্বন্ধে জানা গেছে, গত ২৬ মে বাগমারা উপজেলা সদরের বাসিন্দা মাজেদা পেটের ব্যথা নিয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ছেলেদের ভাষ্যমতে পেটের ব্যথা সহ্য না করতে পেরেই হয়তো তাদের মা মাজেদা গভীর রাতে ওয়ার্ডের টয়লেটে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে পরিবারের কাছে পুলিশ লাশ হস্তান্তর করে। অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের চিকিৎসক মামুনুর রশিদের কাছে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, কয়েক বছর আগেও রাজশাহীসহ সারাদেশে আত্মহত্যার খবর খুব বেশি একটা শোনা যেতনা। কিন্তু বর্তমানে পত্রিকার পাতা খুললেও চোখে পড়ে আত্মহত্যার মত মারাত্মক ঘটনা। যা আমাদের সমাজের সচেতন মানুষদের ভাবিয়ে তুলেছে।
তিনি আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আরও জানান, স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের জের ধরে অভিমানে অনেক নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তাদের মধ্যে বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছা থাকে না। সংসারে অভাব-অনটন, চাওয়া-পাওয়ার সংমিশ্রণ না ঘটলে এবং পরকীয়ার কারণেও অনেক নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করে থাকেন। কাঙ্খিত কোনাে কিছু না পেলেই তাদের মধ্যে নিজেকে শেষ করে দেয়ার ইচ্ছা কাজ করে। আর সেই ইচ্ছা থেকেই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যার করার আগেও সে সব নারী ও পুরুষরা মনে করেন কেউ যদি তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন তাহলে তারা আত্মহত্যা করবে না। কিন্তু অবশেষে যখন কাউকেই সে পাশে পায় না তখন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। আত্মহত্যার মত ঘটনাগুলোকে কমিয়ে আনতে হলে ব্যক্তির পাশাপাশি সমাজকেও অনেক ভূমিকা পালন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
শাহরিয়ার অনতু/এসএস/এমএস