ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরির অভিযোগ


প্রকাশিত: ০৬:৫৮ এএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার সামন্তসার ইউনিয়নর ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরিতে সহযোগিতা করা, নাম জারি করার নামে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া, ভূমিহীনদের খাস জমি বন্দবস্তের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

জাল দলিল তৈরিতে সহযোগিতা করা হয়েছে বলে উক্ত ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)’র কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন সামন্তসার ইউনিয়নের এক বাসিন্দা। অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা ভূমি কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মো. মোজাম্মেল হক ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে ১১২৫ টাকা বেতন স্কেলে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তাকারেরচর ইউনিয়নে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি সামন্তসার ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। সর্বশেষ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি হয়ে ২০১৫ সালে নভেম্বরে ৫ হাজার ২শ টাকা স্কেলে সকল ভাতাদিসহ ১৬ হাজার ৮৪২ টাকা বেতন উত্তোলন করেছেন। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে তিনি জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। রা

সম্প্রতি সামন্তসার ইউনিয়নের লাকাচুয়া গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল ছালাম ও তার ওয়ারিশদের ৩৪ শতাংশ জমি অবৈধভাবে একই গ্রামের মোখলেছ মৃধার নামে নাম জারি করে দেয়া হয়েছে। মোখলেছ মৃধা গংদের নামে নাম জারি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে মোখলেছের পূর্ব পুরুষদের নামে একটি জাল দলিল তৈরি করতে এই ভূমি কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছেন বলে জেলা ভূমি কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন লাকাচুয়া গ্রামের মো. বিল্লাল খান। সম্পত্তি ফিরে পেতে আদালতে মামলা করে প্রতিপক্ষের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভ্যানচালক আব্দুল ছালাম ছৈয়াল।

এই কর্মকর্তা ঘড়িষার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের সময় অনেক খাস জমি বন্দোবস্ত দেন। এ সময় সরকারি নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে খাস জমি দখলদার ভূমিহীনদের না দিয়ে টাকার বিনিময়ে ভূমিহীনদের সম্পত্তি তুলে দিয়েছেন বিত্তবানদের হাতে। তার চাহিদামত টাকা দিতে না পারায় অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেক ভূমিহীন।

ঘড়িষার ইউনিয়নের চরমোহন গ্রামের জয়তন নেছা এসএ রেকর্ডে ২০ শতাংশ জমি খরিদান সূত্রে মালিক হয়ে ঘর করে বসবাস করেন। মাঠ জরিপে এসে তার সেই জমি খাস খতিয়ানভূক্ত হয়ে যায়। ভূমিহীন হয়ে যায় পরিবারটি। প্রায় ১৫ বছর আগে হালিমা আক্তার নামে এক কন্যা সন্তান রেখে মারা যায় তার স্বামী হাকিম বেপারী। স্বামীর মৃত্যুর পরে মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে চলছে তার জীবন। কিন্তু খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া শুরু হলে জয়তন নেছা তার দখলকৃত ২০ শতাংশ জমির জন্য আবেদন করেন। ভূমি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হকের ১০ হাজার টাকার চাহিদা পূরণ করতে না পারায় স্থানীয় প্রভাবশালী কাউম আকন নামে এক ব্যক্তিকে মোটা অংকের বিনিময়ে জমিটি বন্দবস্ত দিয়ে দেন।

একই গ্রামের আব্দুল করিম দেওয়ানসহ প্রায় ১৫টি পরিবারের ৪ একর ৮২ শতাংশ বসতবাড়ির জায়গা খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। ভূমিহীন হয়ে যায় পরিবারগুলো। একই দশায় পড়েছেন তারাও। টাকার বিনিময়ে ভূমি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক উক্ত জমি স্থানীয় প্রতাবশালী নুর ইসলাম নামে এক ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনদের নামে বন্দোবস্ত দিয়ে দেন।

শুধু জয়তন নেছা, করিম দেওয়ান ও আব্দুল ছালামরাই নয় তার অর্থ লালশার শিকার হয়েছেন তার কর্ম এলাকার অনেকেই। যারা টাকা দিতে পেরেছেন তারা পার পেয়েছেন আর যারা পারেননি,তারা নিঃস্ব হয়েছেন।  

লাকাচুয়া গ্রামের আব্দুল ছালাম ছৈয়াল বলেন, তহশীলদারের সহায়তায় মোখলেছ মৃধা আমাদের সম্পত্তি জাল দলিল তৈরি করে নাম জারি করে নিয়ে যায়। জমি ফিরে পেতে মামলা করায় প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছনি। প্রাণের ভয়ে ছয় মাস যাবৎ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

চরমোহন গ্রামের জয়তন নেছা বলেন, আমার জমি পেতে ছবি দিয়ে কাগজ দিয়েছিলাম। আমার কাছে দশ হাজার টাকা চেয়েছিল তহশীলদার মোজাম্মেল। আমি টাকা দিতে পারিনি। এখন শুনতেছি আমার জমিটা কাউম আকনকে দিয়ে দিয়েছে।

চরমোহন গ্রামের আরেক ভূমিহীন আব্দুল করিম দেওয়ানের মেয়ে ফাতেমা আক্তার বলেন, জমি বন্দোবস্ত পেতে আমরাও আবেদন করেছিলাম। তহশীলদারের দাবি পূরণ করতে পারিনি। বেশি টাকা পেয়ে অন্যদের নামে বন্দোবস্ত করে দিয়েছে।

লাকাচুয়া গ্রামের মোখলেছ মৃধা বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে জিদ করে তহশীলদারের সহযোগিতায় জাল দলিল তৈরি করে নিজের নামে জমির নাম জারি করেছিলাম। ওরা মামলা করায় নাম জারি বাতিল হয়ে গেছে। তবে আমরা কাউকে ভয় ভীতি দেখাইনি।

চরমোহন গ্রামের প্রভাবশালী নুর ইসলাম দেওয়ান বলেন, জানেন তো টাকা হলে এদেশে অনেক কিছুই করা যায়। সুযোগ হয়েছিল তাই আত্মীয় স্বজনদের একটু জমি এনে দিয়েছি।

এ ব্যাপারে সামন্তসার ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, খাস জমি কমিটির মাধ্যমে বন্দাবস্ত করে দেয়া হয়েছে। টাকা নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। জাল দলিল সম্পর্কে তার কিছুই জানা ছিল না।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভিখারুদ্দৌলা চৌধুরী বলেন, জাল দলিল তৈরিতে তহশীলতার সহযোগিতা করেছে বলে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। অন্য কোনো বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছগির হোসেন/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।