মাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে মায়ের দেশে সপরিবারে ডা. মিঠু


প্রকাশিত: ১২:০৭ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

২০ ডিসেম্বর ছিল ডা. ফজলুল বারী মিঠুর ৪১তম জন্মদিন। বগুড়াবাসীর প্রিয় মুখ এই ডা. মিঠু ওই দিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘ছাত্র জীবনে প্রতি বছর জন্মদিনে আমার বাড়িতে পার্টি হতো। আমার মা সবাইকে নিমন্ত্রণ করতেন, তার আদরের একমাত্র ছেলের জন্মদিনে। আজ আমার মা নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এ কারণে আর কেউ আদর করে বাসায় পার্টি দেয়না। মা আমি সব সময় তোমাকে অনেক মিস করি। তোমাকে ছাড়া কোথাও আপন কাউকে পাই না।

ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসের পর পার হয়েছে মাত্র ৩৬ দিন। কে জানে অতি আপন, প্রিয় মায়ের বুকে এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ডা. মিঠু। শুধু তিনিই নয় তার সঙ্গে না ফেরার দেশে আরো সঙ্গী হয়েছেন তা স্ত্রী আসমা-উল-হুসনা (৩৪), বড় মেয়ে ফাহমিদা ফাইরুজ (১১ ), ছোট ছেলে পূর্ণ (৩) ও গৃহপরিচারিকা সীমা (২১)। একটি ছেলে সন্তানের শখ ছিল এই দম্পত্তির। যার কারণে ৩য় সন্তান ছেলে হলে নাম রাখেন পূর্ণ। বন্ধুদের মজা করে এভাবেই বলতেন ডা. মিঠু। তাদের পরিবারের বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেঝ মেয়ে ফাইজার (৮) অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরিভাবে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার টামটা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাইভেটকারের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্বপরিবারে নিহত হন ডা. মিঠু। ঘটনার সময় তিনি নিজে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ভুল করে একমুখি পথে ঢুকে পড়ার কারণে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

ডা. মিঠুর বাড়ি বগুড়া হলেও তিনি ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বোন সাবিনা ইয়াসমিন। তবে বগুড়া শহরের নারুলী এলাকায় তার বাড়ি রয়েছে। বাড়ির পাশেই লাগানো মায়ের নামে করা ফজিলাতুন্নেছা মেমোরিয়াল হেলথ হোম। সেখানে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করতেন তিনি। এলাকার কিংবা বাইরের দরিদ্রদের জন্য ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল।

ডা. মিঠুর বন্ধু টিএমএসএস এর মিডিয়া বিভাগের কর্মকর্তা রেজাউল করিম রয়েল জানান, নিহতের বাবা শামসুদ্দিন ফটু বগুড়া সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ফটু চেয়ারম্যান নামেই পরিচিত। মৃত্যুকালে তিনি বাবা, চার বোন, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার এই মৃত্যুতে আমরা সকলে শোকাহত। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাই সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী করছি।

স্বজনেরা জানান, কুমিল্লায় এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পরিবারসহ ঢাকায় ফিরছিলেন ফজলুল বারী। সেখানেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। সকালে অফিস করার তাড়া থাকার কারণে রাতেই তীব্র কুয়াশার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বগুড়া মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন ডা. মিঠু। মেধা, আচার ব্যবহার ও বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের কারণে যে কাউকে আপন করে নিতে পারতেন তিনি। তার মুত্যুতে গ্রামে থাকা বৃদ্ধ বাবা শামসুদ্দিন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। একমাত্র ছেলে ও ছেলের বৌ নাতি-নাতনীদের হারিয়ে তিনি নির্বাক হয়ে গেছেন। চোখ দিয়ে শুধু গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। এই বৃদ্ধ বয়সে ছেলের খাটনির ভার তিনি সইতে পারবেন না এমনটিই ভাবছেন।

মিঠুর নারুলীর বাড়িতে মঙ্গলবার ছিল পিনপতন নিরবতা। আত্মীয় -স্বজনরা ভিড় করলেও তার ৪ বোন জেলার বাইরে থাকার কারণে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। তবে নিকট আত্মীয় আমিনুল নামের একজন জানান, মঙ্গলবার সকালে নারুলী হাই স্কুল মাঠে নিহতদের ১ম জানাজা শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হবে গ্রামের বাড়ি খামারকান্দিতে। সেখানে ২য় জানাজা শেষে লাশ তাদের পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের পাশে দাফন করা হবে।

এদিকে স্বপরিবারে নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বিএমএ বগুড়া শাখার সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু ও সাধারণ সম্পাদক ডা. রেজাউল আলম জুয়েল। এক শোক বার্তায় তারা নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

লিমন বাসার/ এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।