পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বসিত যশোরের সবজি চাষি-ব্যবসায়ীরা

মিলন রহমান মিলন রহমান , জেলা প্রতিনিধি, যশোর
প্রকাশিত: ০৬:৩৪ পিএম, ২১ জুন ২০২২

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির কৃষক মিজানুর রহমান স্থানীয় সবজি বাজারে বেগুন ৪৫ টাকা, পটল ১০ টাকা, কাকরোল ৩০ টাকা ও উচ্ছে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তবে রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে এ সবজির দাম দ্বিগুণ।

কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা দাম পাইনে বলে হা-হুতাশ করি। আর ঢাকার লোকজন বেশি দামে সবজি কেনে বলে দুঃখ করে। দুপক্ষের এ দুঃখ কষ্ট দূর করবে পদ্মা সেতু। আমরা সরাসরি ৪ ঘণ্টায় সবজি ঢাকায় পাঠাতি পারবো। দাম ভালো পাবো, খরচও কমবে। আর ঢাকার মানুষও একটু কম দামে টাটকা সবিজ কিনতি পারবে।’

শুধু মিজানুর রহমানই নয়, যশোরের সবজি জোনের সব কৃষকই আশায় বুক বেঁধেছেন। নতুন স্বপ্ন দেখছেন পদ্মা সেতু নিয়ে। তাদের ভাবনা, পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য বিপণনে নতুন বিপ্লব ঘটবে।

চুড়ামনকাটি এলাকার আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম গত সপ্তাহে এক ট্রাক পেঁপে ও কচুর লতি নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন। বাড়তি দামের আশায় ঢাকায় গেলেও স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। ফেরিঘাটে (দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া) আটকে থাকায় রাজধানীতে পৌঁছাতেই লেগেছে ১৫ ঘণ্টা। ট্রাক ভাড়া গুণতে হয়েছে দেড়গুণ। আবার অনেকটা সময় ট্রাকে বস্তাবন্দি থাকায় সবজির মানও কমেছে। পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে সবজি চাষিদের এ দুর্ভোগ কাটবে বলেই তার প্রত্যাশা।

চুড়ামনকাটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু। যান চলাচল শুরু হলে এখানকার মানুষের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। যশোরের কৃষকরা সবজি নিয়ে চার ঘণ্টায় সরাসরি ঢাকার যেতে পারবে। এতে সময় ও পরিবহন ব্যয় যেমন কমবে, তেমনি সবজির মানও থাকবে অটুট-টাটকা। সময় ও খরচ কমলে কৃষকও যেমন লাভবান হবেন, তেমনি ভোক্তাও সাশ্রয়ী মূল্যে সতেজ সবজি কিনতে পারবেন।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবজির সবচেয়ে বড় মোকাম সাতমাইল-বারীনগর হাট। এ হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা সদরের বারীনগরের কৃষক দ্বীন মোহাম্মদ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বসিত।

তিনি বলেন, এ হাটে এক কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকায়। ঢাকার কারওয়ান বাজারে সেই পেঁপের দাম ৪০ টাকা। অন্য সবজির দামও এমনই। পদ্মা সেতু চালু হলে দু-তিন কৃষক মিলে একটি ট্রাক ভাড়া করে সবজি নিয়ে ঢাকার বাজারে সরাসরি দিতে পারলে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু ফেরিঘাটের কারণে এটি সম্ভব ছিল না। কারণ ঘাটের জ্যাম, পরিবহন ব্যয়, সবজি পচে যাওয়ার শঙ্কা ইত্যাদি। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।

দ্বীন মোহাম্মদ আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ৪ ঘণ্টায় সবজি নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারবো। সবজি ভালো থাকবে, দামও ভালো পাওয়া যাবে।

je-(2).jpg

আরেক সবজি চাষি আহম্মদ আলী বলেন, সবজি ঢাকায় পাঠানোর সময় চিন্তায় থাকি সময়মতো ঘাট পার হওয়া নিয়ে। কারণ সময়মতো পার হতে না পারলে সঠিক সময়ে ঢাকার আড়তে সবজি পৌঁছাবে না। এতে সবজির মান কমে যাবে। দামও কম হবে। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ফেরি বন্ধ থাকে। সে সময় আরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। দেরির কারণে সবজি বাসি হয়ে গেলে দাম তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। এমন বিড়ম্বনায় অনেক টাকার লোকসানও হয়েছে।

সবজি চাষিরা জানান, শুধু সরাসরি সবজি পাঠানোর বিষয়টি নয়, ঘাটের কারণে অনেক ব্যাপারী এ অঞ্চলে আসে না। পদ্মা সেতু চালু হলে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেক ব্যাপারীও পাইকারি সবজি কিনতে যশোরে আসবেন। ক্রেতা বাড়লে স্থানীয় মোকামেও কৃষকরা ভালো দামে সবজি বিক্রি করতে পারবেন।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, যমুনা সেতু চালুর ফলে উত্তরাঞ্চলে কৃষিখাত বিপ্লব ঘটেছে। তেমনি পদ্মা সেতু চালু হলে উত্তরের মতো কৃষি বিপ্লব ঘটবে যশোর অঞ্চলেও।’

তার মতে, যশোরে মোট ৩৩ ধরনের সবজি উৎপাদন হয়। হেক্টর প্রতি সবজির গড় ফলন ২৩-২৫ টন। যা অন্য জেলার চেয়ে বেশি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ সবজি রাজধানীসহ পদ্মার ওপারে বিভিন্ন জেলায় যায়। ফেরিঘাটে সময় বেশি লাগায় অনেক সবজি নষ্ট হয়। পদ্মাসেতু চালু হলে সবজি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও ভালো পাওয়া যাবে।

এসজে/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।