বন্যায় সিলেট বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিলেট বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২০ জুন) বৃষ্টি কম হওয়ায় বন্যার পানি সামান্য কমেছে। এছাড়া কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে মুঠোফোনের সংযোগও সচল হয়েছে। তাই বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর সঙ্গে ক্রমশ যোগাযোগ তৈরি হওয়ায় বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ ক’দিনের বন্যায় মৃত্যুর খবর আসছে।
বন্যায় নিহতদের মধ্যে সিলেট সদরে পানিতে ডুবে তিনজন, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মহানগরে দু’জন, সুনামগঞ্জের ছাতকে তিনজন, মৌলভীবাজারে ডুবে একজন ও অতিবৃষ্টির কারণে টিলা ধসে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সদর উপজেলায় পৃথক ঘটনায় দাদি-নাতিসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কান্দিগাঁও ইউনিয়নে নিহতরা হলেন- সদর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম (২৪) ও তার দাদি ছুরেতুন নেছা (১০৫)। তাদের বাড়ি সুজাতপুর গ্রামে। অপর ব্যক্তি হলেন আব্দুল হাদি (১৮)। তিনি নলকট গ্রামের বাসিন্দা।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, এ কয়দিন বিদ্যুৎহীন থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। যে কারণে অনেক খবর মেলেনি। এখন আস্তে আস্তে চারদিক থেকে প্রকৃত অবস্থার খবর আসবে।
তিনি বলেন, আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি তার পরিবারের সঙ্গে মদীনা মার্কেট এলাকায় বসবাস করেন। বন্যার পানি বাড়ার খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ দাদি ও চাচাতো বোনকে উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার সকালে একটি নৌকা নিয়ে যান। নৌকা নিয়ে দাদিকে নিয়ে শহরে ফেরার পথে সুজাতপুর আইডিয়াল স্কুল এলাকায় পানির স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়।
এ সময় তার চাচাতো দুই বোন উল্টে যাওয়া নৌকা ধরে প্রাণে বাঁচলেও দাদি ও নাতি পানিতে তলিয়ে যান। শুক্রবার (১৭ জুন) দাদি ছুরেতুন নেছার মরদেহ ভেসে ওঠে। রোববার (১৯ জুন) সকালে আবুল কাশেমের মরদেহ একই জায়গায় ভেসে ওঠে। দু’জনের মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
সিলেট সদরের কান্দিগাঁও ইউনিয়নের নলকট গ্রামে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে আব্দুল হাদি (১৮) নামে এক তরুণ ভেসে যান। রোববার বাড়ির পাশে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। হাদি নলকট গ্রামের প্রবাসী কাছা মিয়ার ছেলে।
নলকট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালিক মামুন মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া শনিবার (১৮ জুন) নগরের শাপলাবাগ এলাকায় বন্যার পানিতে পড়ে থাকা টেলিভিশনের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে টিটু চৌধুরী (৩৫) নামের এক যুবলীগ নেতা মারা গেছেন। তিনি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হরিপুর গ্রামের ধীরেন্দ্র চৌধুরীর ছেলে। টিটু চৌধুরী তার মাকে নিয়ে শাপলাবাগ এলাকায় ভাড়া থাকতেন। একইভাবে বন্যার পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে রোববার (১৯ জুন) এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রহমান জানান, ছাতক পৌরসভার কানাখালি রোডের আখড়া এলাকায় পিযুষ (৪০) ও ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার জুনেদ (২৭) পানিতে ডুবে মারা গেছেন। জুনেদ গত শনিবার ছাতক থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হন। রোববার তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া ছাতকের জাউয়া বাজার থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী হানিফা বেগমের (৯) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার বিকেলে পাশের কাইতকোনা এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত হানিফা বেগম শান্তিগঞ্জ উপজেলার বড়মোহা গ্রামের মৃত জিলু মিয়ার মেয়ে। মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে বানের পানিতে ডুবে মারা যায় হানিফা।
নিহত হানিফার মামা মো. ছফেদ আলী পীর জানান, হানিফাসহ তারা নৌকায় বাড়ি ফিরছিলেন। জাউয়া ডিগ্রি কলেজের কাছে তাদের বহনকারী নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকার আরোহীরা সবাই রক্ষা পেলেও হানিফাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সে বানের পানিতে ভেসে যায়। ঘটনার দু’দিন পর রোববার বিকেলে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। খবর পেয়ে তার মরদেহ স্বজনরা উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
অপরদিকে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে গত শনিবার এক শিশু তলিয়ে যায়। রোববার তার মরদেহ ভেসে ওঠে। তবে ওই শিশুর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাদ চা বাগানে টিলা ধসে রাজন ব্যানার্জি (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, একজন নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েছি। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কাজে এই কয়েকদিন খুবই ব্যস্ত থাকায় এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারিনি।
ছামির মাহমুদ/এফএ/জিকেএস