ছাগল পালন করে বিলকিস বেগমের বছরে আয় ২ লাখ টাকা
বিলকিস বেগমের (৪৫) স্বামী মো. ছাদেক পেশায় একজন দিনমজুর। স্বামীর সামান্য আয়ে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে চলতো সংসার। ঠিকমতো তিনবেলা খাবারও খেতে পারতেন না। পরিবারের এ অবস্থা দেখে একটি ছাগল কিনে দেওয়ার জন্য স্বামীর কাছে বায়না ধরেন বিলকিস। পরে তার স্বামী ধারদেনা করে একটি ছাগল কিনে দেন।
ওই একটি ছাগল থেকে বাড়তে থাকে ছাগলের সংখ্যা। দিন দিন বড় হতে থাকে বিলকিস বেগমের ছাগলের খামার। খামারের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কষ্টের দিনও শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রতি বছর ১৫-২০টি ছাগল বিক্রি করে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করেন বিলকিস বেগম। এখনও তার খামারে ছোট-বড় মিলে ২০টি ছাগল রয়েছে।
বিলকিস বেগম ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতুলি গ্রামের চৌকিদার বাড়ির মো. ছাদেক চৌকিদারের স্ত্রী।
বিলকিস বেগম জাগো নিউজকে জানান, বিয়ের পর থেকে স্বামী মো. ছাদেক দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। একে একে তাদের ঘরে তিন ছেলে ও এক মেয়ে জন্ম নেয়। সংসার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খরচও বাড়তে থাকে। কিন্তু স্বামীর সামান্য আয়ে সবাই ঠিকমতো তিনবেলা খেতে পারতেন না। অনাহারেও কাটিয়েছেন অনেক দিন।
প্রায় ১২ বছর আগে তিনি এলাকার কয়েকজন নারীকে দেখেন তারা ছাগল ও গরু পালন করে বেশ ভালো টাকা আয় করছেন। এরপর তিনি স্বামীকে একটি ছাগল কিনে দিতে অনুরোধ করেন। পরে তার স্বামী ধারদেনা করে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা বাজার থেকে একটি ছাগল কিনে দেন।
সংসারের পাশাপাশি ছাগলটি লালন-পালন করতে থাকেন বিলকিস বেগম। তিন-চার মাস পর ছাগলটি দুটি বাচ্চা দেয়। এর ছয়মাস পরে আরও দুটি বাচ্চা জন্ম দেয় ছাগলটি। এভাবে বাড়তে থাকে ছাগলের সংখ্যা। অন্যদিকে একের পর এক ছাগল বিক্রি করতে থাকেন বিলকিস।
ছাগল পালনের দুই বছরের মধ্যে সংসারে সুদিন ফিরে আসে। তখন সংসার চালাতে আর স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভর করতে হতো না। ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি টাকা জমাতে শুরু করেন বিলকিস বেগম।
ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে তিন ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের বিয়েতে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয় বিলকিস বেগমের। আটটি ছাগল বিক্রি করে তিনি এ টাকার ব্যবস্থা করেন।
বিলকিস বেগমের তিন ছেলেই জেলে পেশায় নিয়োজিত। ছেলেরা আয়-রোজগার করায় তিনি এখন আর আগের মতো সংসারে টাকা খরচ করেন না। মাঝে-মধ্যে ছাগল বিক্রির কিছু টাকা খরচ করলেও বাকি টাকা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য জমা করছেন। বর্তমানে প্রতি বছর ১৫-২০টি ছাগল বিক্রি করেন প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করছেন বিলকিস বেগম।
বিলকিস বেগমের স্বামী মো. ছাদেক জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায় ১২ বছর আগের কথা। আমার স্ত্রীর অনুরোধ করে আমাকে বলে, আমরা তো অনেক অভাবে আছি। আমাদের গ্রামের অনেক নারীরা ছাগল পালন করে অভাব দূর করেছে। আমাকেও একটা ছাগলের বাচ্চা কিনে এনে দেন। দেখি অভাব দূর করতো পারি কি না। তখন তার কথামতো ধার করে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনে এনে দেই। বর্তমানে আমার সংসার কোনো অভাব নেই। আমরা অনেক ভালো আছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা আবু মুছা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় দেখেছি বিলকিল বেগমের সংসার অনেক কষ্টে চলতো। ছাগল পালা শুরু করার পর থেকে তার অবস্থা ভালো হতে শুরু করেছে। বর্তমানে তার সংসার কোনো অভাব নেই।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল জানান, বিলকিস বেগমের মতো জেলার অনেক নারী-পুরুষ ছাগল পালন করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ তাদের সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এসআর/এএসএম