সিলেটের প্রথম মেয়র কামরানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৯:২৮ এএম, ১৫ জুন ২০২২
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র, দীর্ঘদিনের মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ২০২০ সালের ১৫ জুন না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। আজ ১৫ জুন তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি আমৃত্যু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও ছিলেন।

করোনা মহামারীর সময়েও মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান দাঁড়িয়েছিলেন কর্মহীন মানুষদের পাশে। খাদ্য সহায়তা বিতরণ করতে গিয়ে তিনি করোনা আক্রান্ত হন এবং মারা যান।

বর্ণাঢ্য এক রাজনীতিকের নাম কামরান

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দীর্ঘ সময়কার মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। জনপ্রতিনিধি হিসেবেও তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। সিলেটের জনগণ বারবার তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে শহর, নগর ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন দীর্ঘদিন।

সদা হাস্যোজ্জ্বল কামরান মাথায় সাদা টুপি পরতেন, মুখে কালো গোঁফ। চোখে সাদা চশমা পরা লোকটি ছিলেন সিলেটের মানুষের নয়নমণি। ধীরস্থীর প্রকৃতির কামরান সর্বদা মানুষের পাশে ছিলেন। তিনি ছিলেন নগরবাসীর বিপদের আশ্রয়স্থল। এ কারণে ১/১১’র সময় জেলে থেকেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন কামরান।

সিলেট সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকেই যে নামটি মেয়র হিসেবে মিশে আছে তা হলো বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। শুরু থেকে দশ বছর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন তিনি। এরপর নগরপিতার আসনটি ছাড়তে হলেও নামের পাশে থেকে যায় ‘মেয়র কামরান’।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের জন্ম ১৯৫৩ সালে। বাবার লিখে রাখা নোটটি হারিয়ে যাওয়ায় তারিখটা আর জানা হয়নি। বছরের প্রথম দিনই পালন করতেন নিজের জন্মদিন। জিন্দাবাজার দুর্গাকুমার পাঠশালায় তার পড়াশোনার প্রথম পাঠ। এরপর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পাট শেষ করেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয় ২০০২ সালের ২৮ জুলাই। বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে নবগঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র করা হয়। এরপর ২০০৩ সালের ২০ মার্চের নির্বাচনে তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে তৎকালীন সরকারি দল বিএনপির প্রার্থী এমএ হককে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সিলেটের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৭৩ সালে সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন কামরান।

ওয়ান ইলেভেনের সময় জেলে থেকেও কামরান বিএনপির প্রার্থী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এম এ হককে ফের পরাজিত করে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান তিনি। এরপর ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনেও আরিফের কাছে হেরে যান কামরান। কিন্তু এরপরও তিনি নগরবাসীর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি। এ নগরের মানুষের সুখে-দুঃখে তিনি পাশে ছিলেন।

ষাটের দশকে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়া এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ ১৯৭৩ সালে যখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র তখন শুরু হয় দেশের প্রথম পৌর নির্বাচন। এ সময় তিনি সিলেট পৌরসভায় ৬৪৪টি ভোট পেয়ে তোপখানা ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হন। সেসময় সিলেট শহরে মাত্র ৫টি ওয়ার্ড ছিল। তোপখানা ছিল ৩নং ওয়ার্ডের অধীন। এরপর ১৯৭৭ সালে আবার নির্বাচন হয়। সেবারও কমিশনার নির্বাচিত হলেন তিনি।

এরপর কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে চলে যান কামরান। দেশে এসে ১৯৮৯ সালে আবারও নির্বাচনে অংশ নিলেন। তখনও তিনি একই ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। তখন তার প্রতীক ছিল আনারস।

সেই সাফল্যের পথ ধরে এভাবে ১৯৯৫ সালে তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নিজ দল ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি দুইবার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন। কিন্তু ২০১৩ সালে নিজ দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিরোধী দলের প্রার্থীর কাছে পরাজয় মেনে নিতে হয় সাবেক জনপ্রিয় এই মেয়রকে।

সিলেট সিটি করপোরেশন উন্নীত হওয়ার পর ২০০২ সালের ২৮ জুলাই তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৭ সালের ৬ এপ্রিল গ্রেফতার হন কামরান। এক মাস কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর ২৮ মে তিনি আবার গ্রেফতার হন। ওই মাসে কারান্তরীণ হন তিনি।

কারাগারে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনী প্রচারণার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কথা শোনা গেলেও পরে তা হয়নি। অবশেষে তার নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত হয় ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট নাগরিক পরিষদ। কারাগারে থেকে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি আবারও ইতিহাস গড়েন।

তখন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৮৩ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। সে সময় মেয়র কামরান সবমিলিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৩৬ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ ফ ম কামাল ৩২ হাজার ৯৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি পদে ছিলেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে কামরানকে বাদ দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে। আর কামরানকে করা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এর আগে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন কামরান।

প্রয়াত জননেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মানিক পীর (রাহ.) নাগরিক গোরস্তানে মরহুমের কবর জিয়ারত। মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডের মসজিদে বাদ জোহর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন।

উক্ত কর্মসূচিতে মহানগর আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন।

পারিবারিক কর্মসূচি

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৪ জুন অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ ও রাতে খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল। ১৫ জুন খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল, বেলা সাড়ে ১১টায় ছড়ারপাড়সহ বাড়িতে বিশেষ দোয়া এবং বিভন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় শিরনী বিতরণ।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরকালে আল্লাহ যেন জান্নাতবাসী করেন এজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের দোয়া এবং কর্মসূচি সফলে সকলের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ কামনা করেছেন তার ছেলে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু।

ছামির মাহমুদ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।