কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি অর্ধলাখ মানুষ

মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:০৫ পিএম, ১৩ জুন ২০২২

কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জিঞ্জিরাম, ধরনী ও কালজানি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারীর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

অব্যাহত পানিবৃদ্ধিতে উপজেলার রৌমারী সদর, শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা ও যাদুরচর ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় বাঁশের মাচা ও চৌকি উঁচু করে রাত্রিযাপন করছেন অনেকে।

১১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টি এবং দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যায় রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ভেলায় করে চলাচল করছেন প্লাবিত এলাকার মানুষজন।

jagonews24

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১৪৭ হেক্টর জমির ধান, ২২৩ হেক্টর জমির পাট, ৪৯ হেক্টর জমির তিল ও ৭৩ হেক্টর জমির শাকসবজির ক্ষেত।

সোমবার (১৩ জুন) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন। চারদিকে পানি থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক খেটে-খাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষ। পানিবন্দি এসব মানুষ বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের চরম সংকটে ভুগছেন।

jagonews24

চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসিরা। পরিবার ও গবাদিপশু নিয়ে নৌকায় করে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন তারা। পানিবন্দি এসব এলাকার নারী-শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষকে নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় করে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।

রৌমারী সদর ইউনিয়নের কড়াইকান্দি গ্রামের আয়নাল মোল্লা (৪৫) জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনদিন ধরে বাঁশের মাচা ও চৌকি উঁচু করে সাপের ভয়ে মশারি টেনে কোনোরকম রাত্রিযাপন করছি।’

jagonews24

যাদুরচর ইউনিয়নের বকবান্দা গ্রামের দিনমজুর আব্দুল কুদ্দুস (৫০) বলেন, ‘চারদিকে পানি থাকায় কোথাও কাজ জুটছে না। গত তিনদিন ধরে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। কোনো জনপ্রতিনিধি খোঁজ-খবর নিতে আসেনি আমাদের।’

একই ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী এলাকার কৃষক করিম মিয়া বলেন, ‘এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় দুই একর জমিতে পাটচাষ করেছিলাম। পুরো ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আমি তো পথে বসে গেলাম।’

এদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতা। যাদুরচর ইউনিয়নের অসংখ্য বসতবাড়ি এরই মধ্যে জিঞ্জিরাম নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই গাছপালা কেটে বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙনের মুখে রয়েছে ইউনিয়নের বেশকিছু বসতবাড়ি।

jagonews24

ওই ইউনিয়নের চর লালকুড়া এলাকার ভ্যানচালক রহমত আলীর বসতবাড়ির একটি ঘর এরই মধ্যে জিঞ্জিরাম নদীর পেটে গেছে। অবশিষ্ট একটি ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাদাগাদি করে রাত কাটালেও সেটিও রয়েছে ভাঙনের মুখে।

রহমত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কয়েক ভাই মিলে এক বাড়িতে থাকছি। জিঞ্জিরাম নদীর তীব্র ভাঙনে আমার একটি বসতঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। অবশিষ্ট একটি ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতংকে রাত কাটাচ্ছি। সেটিও ভাঙনের মুখে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে চলে গেলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়বো।’

যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, সরকারিভাবে এখনও কোনো বরাদ্দ পাইনি। আমার এলাকার বন্যা পরিস্থিতি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।

jagonews24

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউয়ুম চৌধুরী বলেন, বন্যার পানিতে ১৪৭ হেক্টর জমির রুপা আউশ, ২২৩ হেক্টর জমির পাট, ৪৯ হেক্টর জমির তিল ও ৭৩ হেক্টর জমির শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এ পানি স্থায়ী হলে ক্ষেতের সব ফসল নষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।

রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ৪০টি বিদ্যালয় ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বন্যার পানি ওঠায় সেসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

jagonews24

এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বন্যার্তদের জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামীকাল কিছু শুকনা খাবারের প্যাকেট প্রস্তুত করে বিতরণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শনের পাশাপাশি বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি জেলা প্রশাসককে জানানো হযেছে।

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।