নওগাঁয় কমছে বিটিসিএলের গ্রাহক


প্রকাশিত: ০৭:২৪ এএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

নানামুখী সমস্যায় দিন দিন নওগাঁয় বিটিসিএল গ্রাহক সংখ্যা কমছে। অন্যান্য অপারেটরের চেয়ে বিটিসিএলের বিল এবং ইন্টারনেটের মূল্য বেশি হওয়ায় গ্রাহকরা মুঠোফোন কোম্পানিগুলো ব্যবহারে ঝুঁকে পড়েছেন। সংযোগ প্রক্রিয়ায় সমস্যা ও প্রচারের অভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিটিসিএল মাসে লাখ টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নওগাঁ বিটিসিএল অফিস সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁতে ১৯৬২ সালে ম্যাগনেটো (বাটন ঘুরানো), ১৯৬৮ সালে সিবি (স্যানটাল ব্যাটারি), ১৯৮৬ সালে অটো-টেলিফোন এবং ১৯৯৯ সালে ডিজিটাল টেলিফোন চালু হয়। জেলার ১১টি উপজেলায় বর্তমানে মোট ৩ হাজার ৫৬৭ জন গ্রাহক রয়েছে।

নওগাঁ সদরের বিটিসিএল গ্রাহকের ধারণ ক্ষমতা ৩ হাজার ৪শ’ জন হলেও বর্তমানে রয়েছে ২ হাজার ৯৫ জন গ্রাহক এবং এডিএসএল (টেলিফোনের সঙ্গে ইন্টারনেট যুক্ত) গ্রাহকের ধারণক্ষমতা রয়েছে ৩২০ জন। বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে ১৭০জন। অন্যান্য উপজেলায় ইন্টারনেটের কোনো গ্রাহক নেই। বিটিসিএল সংযোগ নিতে খরচ হয় ৬৪৫ টাকা। এর মধ্যে ৩শ’টাকা জামানত, ৩শ’ টাকা সংযোগ ফি এবং ৪৫ টাকা ভ্যাট বাবদ।

ইন্টারনেট সংযোগ ভ্যাটসহ খরচ ৪৬০ টাকা। আনলিমিটেড স্পিড প্রতিমাসে ২৫৬ কেপিবিএস ৪৫০ টাকা,  ৫১২ কেপিবিএস ৭১২ টাকা এবং এক এমপিবিএস এক হাজার ১৫০ টাকা। ইন্টারনেট বিলের সঙ্গে গুণতে হবে অতিরিক্ত টেলিফোন/লাইন বিল ১৩৮ টাকা।

গ্রাহককে সংযোগের জন্য তার এবং টেলিফোন নিজ খরচে কিনে নিতে হবে। প্রতিমাসে গ্রাহককে সর্বনিম্ন (মিনিমাম) বিল ১৩৮ টাকা (লাইন বিল ১২০ টাকা এবং ভ্যাট ১৮ টাকা) দিতে হয়। টেলিফোন বিলের খরচ বেশি হওয়ায় সংযোগ ছেড়ে দিয়েছে নওগাঁ সদরের প্রায় সাড়ে ৫শ’ গ্রাহকের অধিক।

Naogaসারা বাংলাদেশে বিটিসিএল থেকে বিটিসিএল সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৩০ পয়সা মিনিট এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১০ পয়সা মিনিট ভ্যাট ছাড়া (১৫ পয়সা)। এছাড়া অন্যান্য অপারেটর ২৪ ঘণ্টা ভ্যাট ছাড়া খরচ প্রতি মিনিট ৮০ পয়সা।

প্রচার-প্রচারণা না থাকায় বিটিসিএল সর্ম্পকে লোকজনের তেমন ধারণা নেই। বর্তমানে অফিসের কাজ ছাড়া টেলিফোন এখন তেমন ব্যবহৃত হয় না। এছাড়া বেশি টাকা খরচ করে টেলিফোনে কেউ কল দিতে চায় না। টেলিফোন থেকে কল না করলেও প্রতিমাসে (মিনিমাম বিল) টাকা গুণতে হয়। এখন দিন দিন মুঠোফোন এবং বিভিন্ন কোম্পানিগুলো ইন্টারনেট ব্যবহার সহজলভ্য হয়েছে। টেলিফোন সংযোগ নিতে তেমন সমস্যা না হলেও সংযোগ ছেড়ে দিতে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়।

আরো একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ড্রপওয়ার সঙ্গে তারের ঘন-ঘন লুপগুলোর সংযোগ দেয়া হয়। আরএ লুপ ও তার চুরি হয়ে যায়। এছাড়া কথা বলার সময় অনেক সময় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চুরি হয়ে যাওয়া তার কিনতে আবার গ্রাহককে খরচ বহন করতে হয়। মোট কথায় নানা জটিলতার কারণে ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিতে মানুষ আগ্রহী নয়।

শহরে জে.আর সুপার মার্কেটে মেলডি কম্পিউটারের মালিক আতিকুর রহমান শিবলু জানান, প্রায় ৪ বছর থেকে টেলিফোন ব্যবহার করছেন। এখন টেলিফোনের প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। ঢাকা থেকে যাদের টেলিফোন আছে তারা মাঝে মধ্যে ফোন করে। টেলিফোনে সবার নম্বর সেভ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু মোবাইল ফোনে সবার নম্বর সেভ করা থাকে। এজন্য সুবিধা হয়। তবে সাধারণ লোকদের ক্ষেত্রে টেলিফোন ব্যবহার অসুবিধা। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টি হলে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অফিসে ফোন করে আবার ঠিক করে নিতে হয়।

এছাড়া মেসার্স একে ইন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মোস্তফা জানান, টেলিফোন তো সঙ্গে নিয়ে ঘোরা যায় না। এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার সহজলভ্য হয়েছে। টেলিফোন লাইনের সমস্যার কথা অফিসে জানানো হয়নি। প্রায় ৪ মাস থেকে টেলিফোন ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। এজন্য ব্যবহার না করেও প্রতিমাসে বিল দিতে হচ্ছে।

নওগাঁয় ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্কাইনেট পরিচালক সুব্রত সরকার জানান, বিটিসিএলের ইন্টারনেট প্রযুক্তিটা খুবই পুরনো পদ্ধতি হওয়ায় ভাল স্পিড দিতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে বিটিএলের তুলনায় মানুষ বেশি স্পিডে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। অন্যান্য অপারেটরের চেয়ে বিটিসিএলের ইন্টারনেট মূল্যটাও বেশি। সেক্ষেত্রে বিটিসিএলের তুলনায় কম খরচে অন্যান্য অপারেটর দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। এছাড়া বিটিসিএলের সার্ভিসেও সমস্যা রয়েছে। গ্রাহকের কোনো সমস্যা হলে ঢাকায় ফোন করে পরামর্শ নিতে হয়ে।

নওগাঁ বিটিসিএল বিভাগীয় প্রকৌশলী কেবি আজম জানান, টেলিফোন সংযোগের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। টাকা জমা দেয়ার পর ২/৩ দিনের মধ্যে সংযোগ প্রদান করা হয়। টেলিফোন সংযোগের ক্ষেত্রে আগ্রহ থাকলেও সংযোগ তার এবং টেলিফোন নিজ খরচে কিনে নিতে হবে তখন আর আগ্রহ থাকে না। কিন্তু আগে অফিস থেকে টেলিফোন সেট এবং সংযোগ তার দেয়া হতো।

তিনি আরও জানান, অনেকেই যারা টেলিফোন সংযোগ নিচ্ছেন তারা ৩/৪ মাস ব্যবহারের পর সংযোগ ছেড়ে দেন। তারা জানান যে টেলিফোনের খরচ অনেক বেশি। এছাড়া মুঠোফোন এখন সহজলভ্য হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে তারা মুঠোফোনের প্রতি আগ্রহ এবং বিভিন্ন কোম্পানির সংযোগ গ্রহণ করেন। এছাড়া বর্তমানে মানুষ মুঠোফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত বেশি। তাই তারা সেদিকেই ঝুঁকে পড়ছেন।

আব্বাস আলী/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।