স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি রাস্তা দেখিয়ে টিআর প্রকল্পের টাকা উত্তোলন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পিরোজপুর
প্রকাশিত: ০৬:১২ পিএম, ০৬ জুন ২০২২
স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি রাস্তায় টিআর প্রকল্পের সাইনবোর্ড

পিরোজপুরের নাজিরপুরে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি দুটি রাস্তা দেখিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের দেড় লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে টানানো হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন টিআর প্রকল্পের সাইনবোর্ডও। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শ্রীরামকাঠী গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন শেখের বাড়ির পাশের একটি সুপারি গাছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন টিআর প্রকল্পের কাজের সাইনবোর্ড টানানো আছে। এতে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের সাধারণ টিআর দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দ বাবদ জীবগ্রাম সুখরঞ্জন এদবরের বাড়ি থেকে উত্তমমিস্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত এবং দক্ষিণ শ্রীরামকাঠী গ্রামের তোফাজ্জেল শেখের বাড়ি থেকে সুদেব ঢালীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত বাবদ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৯৮ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়।

ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শ্রীরামকাঠী গ্রামের সুশীল ঢালী বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সামনের মাটির সরু রাস্তাটি ভাঙা ছিল। তা দিয়ে চলাচলে দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। তাই গত বছরের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ইউপির নির্বাচনের (তৃতীয় ধাপ) আগে ওই ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী লিটন হাওলাদার এলাকায় ভোট চাইতে আসেন। তখন রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানাই। এ বাবদ তিনি ১২ হাজার টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে বালু কিনে এবং আমরা স্থানীয় প্রায় ২৫ জন নারী-পুরুষ মিলে ৪০দিন ধরে রাস্তাটি মেরামতের কাজ করি। কিন্তু গত প্রায় দেড় মাস আগে স্থানীয় সংরক্ষিত (৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) নারী ইউপি সদস্য শিলা শিকদারকে প্রকল্পের চেয়ারম্যান দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়।’

ওই ওয়ার্ডের জীবগ্রামের নারায়ন হালদার বলেন, ‘নিরাপদ হালদারের বাড়ির পেছনের রাস্তাটি ভাঙাচুরা ও বর্ষাকালে কাদা হয়ে যায়। তাই নির্বাচনের আগে আমরা গ্রামবাসী মিলে ৭-৮ দিন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে রাস্তার পাশ থেকে মাটি কেটে রাস্তার উঁচু করি। পরে স্থানীয় মেম্বার প্রার্থী হাসান মোল্লা তাতে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করে দেন।’

পরাজিত মেম্বার প্রার্থী মো. হাসান মোল্লা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ভোট চাইতে গেলে গ্রামবাসী আমাকে ভোট দিবেন শর্তে তাদের ওই রাস্তাটিতে বিনামূল্যে প্রায় ৭৪ হাজার টাকার বালু ভরাট করে দেই। এর আগে গ্রামবাসী মিলে রাস্তাটির দুপাশ মাটি দিয়ে উঁচু করেছেন।’

road1

এ জানতে চাইলে টিআর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান (সিপিসি) ও নারী ইউপি সদস্য শিলা শিকদার বলেন, ‘আমি ওয়ার্ডের নতুন মেম্বার। স্থানীয় সাধারণ সদস্য লিটন হালদার (লিটু) আমাকে ওই কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান করেছেন মাত্র। এর বাইরে কিছুই জানি না।’

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য লিটন হালদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাস্তাটি স্থানীদের সহায়তায় করা হয়েছে। তবে আমাদের ইউনিয়নের তেমন কোনো আয় না থাকায় রাস্তা দুটি প্রকল্পের আওতায় দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ টাকা পরিষদের মেম্বাররা নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়নের জন্য ভাগ করে নিয়েছি।’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলতাফ হোসেন ব্যাপারী জাগো নিউজকে বলেন, ওই ওয়ার্ডের নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্য মিলে রাস্তাটি টিআর প্রকল্পের আওতায় দিতে অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী তাদের প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। গত দু-চারদিন ধরে শুনছি ওই রাস্তা দুটি এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করেছেন। বিষয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. এস্রাফিল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। খোঁজ নিয়ে সত্যতা মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।