বাবার অভাব ঘোচাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজ নেন অলিউর
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ০৬ জুন ২০২২
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করার সময় বিস্ফোরণে নিহত অলিউর রহমানের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে।
সোমবার (৬ জুন) সকালে অলিউরের কফিনে মোড়ানো নিথর দেহ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলি গ্রামে নেওয়া হয়।
পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে এলাকার এক বড়ভাইয়ের মাধ্যমে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজ নিয়েছিলেন অলিউর। সেখান থেকে যা আয় করতেন নিয়মিত পাঠিয়ে দিতেন বাবার কাছে। কয়েকদিন পর বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। তবে কে জানতো অলিউরের কফিন তার বাড়িতে ফিরবে।
শনিবার (৪ জুন) রাতে চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এসময় ফেসবুক লাইভে আসেন অলিউর রহমান। লাইভ চলাকালে হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। হাত থেকে ছিটকে পড়ে যায় ফোন। কয়েক মিনিট পর লাইভও বন্ধ হয়ে যায়। পরে সহকর্মীরা তার মরদেহ শনাক্ত করেন।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে খবর আসে অলিউরের ক্ষতবিক্ষত লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ে আছে। খবর পেয়ে স্বজনরা মরদেহ নিতে চট্টগ্রামে যান। সোমবার সকাল ১০ টার দিকে বাড়িতে মরদেহ আসার পর স্বজনদের কান্নায় ফটিগুলি গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
মরদেহ পৌঁছানোর পর অলিউরের বাড়িতে ছুটে আসেন এলাকাবাসী
এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকবছর আগে অলিউরের মা অন্যত্র গিয়ে বিয়ে করেন। পরে তার বাবাও আরেকটি বিয়ে করেন। দ্বিতীয় মা, বাবা ও ভাইবোনদের সঙ্গে বসবাস করতো অলিউর। কর্মধা উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে সে। সংসারে অভাবের কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়ে চাকরিতে যায়। মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করতো। তাই দিয়ে সংসার চলত তাদের।
অলিউরের বাবা আশিক আলী জাগো নিউজকে বলেন, অলিউরের সঙ্গে শনিবার দুপুরে ফোনে আমাদের সর্বশেষ কথা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে তার বাড়িতে আসার কথাও ছিল। আমার সংসারের অভাব ঘোচাতে বড় স্বপ্ন ছিল তার।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার এমন সর্বনাশ কেন হলো? আমার অলিউরের সব স্বপ্ন আগুনে পুড়ে গেলো।
ফটিগুলি গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, অলিউরের মরদেহ সকাল ১০টার দিকে বাড়িতে পৌঁছে। আমরা এলাকাবাসী তার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোকাহত।
তিনি আরও বলেন, একজন দিনমজুরের ছেলে অলিউর। বাবার অভাবের সংসারে সে ছিল আশার আলো। সেই আলো নিভে গেলো।
আব্দুল আজিজ/এমআরআর/এএসএম