সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ফায়ারম্যান আলাউদ্দিনের বাড়িতে শোকের মাতম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত ফায়ারম্যান মো. আলাউদ্দিনের (৩৫) বাড়িতে শোকের মাতম চলছে।
রোববার (৫ জুন) দুপুর ১২টায় নোয়াখালীর চাটখিলে গ্রামের বাড়িতে তার মৃত্যুর খবর আসার পর পুরো এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। নিহত আলাউদ্দিন উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বানসা গ্রামের বড় মুন্সি বাড়ির মো. আবদুর রশিদ মেম্বারের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শনিবার মধ্যরাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে তিনি মারা যান।
এদিকে নিহত আলাউদ্দিনের শ্বশুর মাস্টার ইলিয়াস ভূঁইয়া (৯০), মা মমতাজ বেগম (৭৫) ও স্ত্রী তাসলিমা সুলতানা (২৮) কান্নায় বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা বাড়ির আঙিনায় ভিড় করছেন। আলাউদ্দিনের নিহতের খবরে পরিবারসহ পুরো বানসা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহতের বড় ভাই স্থানীয় কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জহির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে আলাউদ্দিন পঞ্চম। সে সাড়ে সাত বছর আগে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের সাহাপুর গ্রামের মাস্টার মো. ইলিয়াস ভূঁইয়ার মেয়ে তাসলিমা সুলতানাকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে মো. তাজউদ্দিন তাহিম নামে ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেলে আমার ভাইয়ের মরদেহের পাশে তার স্ত্রীর ভাইসহ কয়েকজন আত্মীয় রয়েছেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ বাড়িতে আনার চেষ্টা চলছে। তবে বাবা, মা, ভাইয়ের স্ত্রী ও অবুঝ শিশু সন্তানকে কী বলে সান্ত্বনা দেবো বুঝতে পারছি না।’
চাটখিল ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা চন্দ্র শেখ গাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফায়ারম্যান চাটখিলের আলাউদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। এছাড়া আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গিয়াস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফায়ারম্যান আলাউদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো কোনো বার্তা আসেনি। এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শনিবার (৪ জুন) রাত ১১টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। এ সময় এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। ভেঙে পড়ে আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ।
সবশেষ এ ঘটনায় ৪২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আলাউদ্দিনসহ আটজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী।
ইকবাল হোসেন মজনু/এসজে/জেআইএম